বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তান (Pakistan) নিজেদের সমর্থন হারিয়েছে। আমেরিকাকে বেছে নেওয়ায় রাশিয়া অনেক আগেই পাকিস্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর এখন আফগানিস্তান, সন্ত্রাসবাদ, ওসামা বিন লাদেন ও চীনের কারণে আমেরিকা পাকিস্তানের ওপর চরম চটে রয়েছে। ইরানের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে, অন্যদিকে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গেও দিনদিন উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। বিপরীতে জোটনিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও ভারতের কূটনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ছে। তবে, পাকিস্তানের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও এমনই ছিল। পাকিস্তান সবচেয়ে বড় ধাক্কা তখন খেয়েছিল, যখন কাশ্মীর ইস্যুতে এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের বিষয়ে ইসলামী দেশগুলি তাঁদের সমর্থন করেনি।
এটি ছিল পাকিস্তানের কূটনীতির ব্যর্থতার প্রতীক, অন্যদিকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য। মুসলিম দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (Organization of Islamic Cooperation) অর্থাৎ OIC-কে নিয়েও পাকিস্তানের মোহভঙ্গ হয়েছে।
সৌদি আরবকে (Saudi Arabia) চ্যালেঞ্জ করার জন্য তুরস্ক ও মালয়েশিয়াকে একই সূত্রে গাঁথার পাকিস্তানের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দেয় ভারত, অন্যদিকে পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ সৌদি আরবকেও ক্ষুব্ধ করে। আর সম্প্রতি পাকিস্তান এমন কিছু করেছে যা সৌদির অসন্তোষকে চরমে পৌঁছে দিয়েছে। পাকিস্তানের পরিকল্পনা ছিল মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম সংস্থা OIC-কে দখল করার দুঃস্বপ্ন। কিন্তু সেখানেও ধাক্কা খেয়েছে তাঁরা। বলে দিই পাকিস্তান আর কী করল?
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান ১৯ ডিসেম্বর ২০২১-এ ইসলামাবাদে OIC-র ১৭তম অসাধারন অধিবেশনের বৈঠক ডেকেছিল। এই বৈঠকে OIC-ভুক্ত দেশগুলোর বিদেশমন্ত্রীরা অংশ নেন। ৫৭টি ইসলামিক দেশের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের প্রায় ৭০টি পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নেন।
এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানকে মানবিক সংকট থেকে উদ্ধারে সহায়তা করা। কিন্তু, এই বৈঠক সম্পর্কহীন ইস্যুগুলি ছাড়াও পাকিস্তান নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি সফলের চেষ্টা করেছিল, যদিও এই বিষয়গুলিকে সৌদি আরব সমর্থন করেনি। সৌদি চায় তালিবানরা আগে তাদের পুরনো অভ্যাস ছাড়ুক, জনগণের অধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করুক, তারপর তাদের স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, অন্যথায় তাঁরা এই অর্থ আফগানিস্তানের ভারসাম্যহীনতা ও অস্থিরতা প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করবে।
যদিও, পাকিস্তান তালিবান শাসনের অ-স্বীকৃতি এবং আফগান সঙ্কটের জন্য বিদেশে জমা আফগান তহবিলের ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফান্ড ফ্রিজিংকে দায়ী করেছে।
পাকিস্তান চায় OIC তালিবানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করুক। এছাড়াও পাকিস্তান চায় যে, ওআইসি আফগানিস্তানে একটি যোগাযোগ গোষ্ঠী গঠন করুক। যদিও সৌদি আরব এর বিপক্ষে। এটা প্রথম থেকেই পরিষ্কার ছিল যে পাকিস্তান নিজস্ব এজেন্ডা পূরণের জন্য ওআইসি-র মঞ্চ ব্যবহার করছে।
তালিবানদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং পাকিস্তানের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থসিদ্ধি করা এই বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং এর জন্য পাকিস্তান আফগানিস্তানে মানবাধিকারের দোহাইও দিয়েছে। এটা সেই পাকিস্তান যারা মানব সঙ্কট মোকাবেলার ভারতের পাঠানো গম, খাদ্য শস্যের চালান বন্ধ করে দিয়েছিল।