বাংলা হান্ট ডেস্ক: তীব্র তাপপ্রবাহে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থা ভারতের (India) পড়শি দেশ পাকিস্তানের (Pakistan)। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এমতাবস্থায়, ওই দেশের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দেশে তাপমাত্র সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবং তাপপ্রবাহের কারণে সাধারণ মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এমনকি, সামগ্রিক পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক হয়ে পড়েছে যে দিনের বেলায় বাড়ি থেকে বেরনোটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল জানিয়েছে যে, গত মাসে এশিয়া জুড়ে চরম তাপমাত্রা মানবসৃষ্ট। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এটি আরও খারাপ আকার ধারণ করেছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের একজন উচ্চ আধিকারিক শহিদ আব্বাস রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের জন্য পরিচিত সিন্ধুর শহর মহেঞ্জোদারো, যা ২,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানকার তাপমাত্রা ৫২.২ সেলসিয়াস (১২৬ ফারেনহাইট) পৌঁছেছে। এটি সেখানকার সবথেকে উষ্ণতম দিন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, শহর (৫৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও দেশের (৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়া) তাপমাত্রাও সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, মহেঞ্জোদারো হল একটি ছোট শহর। যেখানে প্রচণ্ড তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় এবং কম বৃষ্টিপাত ঘটে। পাশাপাশি, সেখানে শীতের প্রভাবও হালকা থাকে। এদিকে, সেখানকার বাজারগুলি সবসময় ব্যস্ত থাকলেও অত্যধিক গরমের কারণে দোকানগুলিতে ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে।
এদিকে, তাপমাত্রা পঞ্চাশের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ায় রেস্তোরাঁগুলিও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। যার ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকেরা। শহরের একটি চা স্টলের মালিক ওয়াজিদ আলী জানান, কোনো খদ্দের ছাড়াই তিনি টেবিল-চেয়ার নিয়ে রেস্টুরেন্টে অলসভাবে বসে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি দিনে কয়েকবার স্নান করি। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। এখানে বিদ্যুৎও নেই। গরম আমাদের খুব অস্থির করে তুলেছে।”
আলীর দোকানের পাশেই ৩০ বছর বয়সী আব্দুল খালিকের ইলেকট্রনিক পণ্য মেরামতের দোকান রয়েছে। রোদ এড়াতে দোকানের শাটার অর্ধেক নিচু করে তিনি কাজ করছেন। খালিক বলেন, গরমের কারণে ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক মোশতাক আহমেদ।জানান, এই মরশুমে বাড়ির ভেতরে থাকার অভ্যাস গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের।
এদিকে, জলবায়ু বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর কো-অর্ডিনেটর রুবিনা খুরশীদ আলম সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, সরকার তাপপ্রবাহ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পাকিস্তান পঞ্চম সবচেয়ে সংবেদনশীল দেশ। তিনি আরও বলেন, “আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি, বন্যা দেখেছি।” উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে পাকিস্তানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই সময়ে বেলুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশে অবস্থিত তুরবাত শহরে তাপমাত্রা ৫৪ সেন্টিগ্রেডে পৌঁছেছিল।
আরও পড়ুন: একবার চার্জে ছুটবে ৩০০ কিমি! ভারতীয় সেনাকে হাইড্রোজেন চালিত Tata Bus অর্পণ করল IOCL
পাশাপাশি, পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরে কর্মরত আবহাওয়াবিদ সরদার সরফরাজ বলেছেন যে, এই তাপমাত্রা এশিয়ার দ্বিতীয় এবং বিশ্বের চতুর্থ উষ্ণতম তাপমাত্রা ছিল। জানা গিয়েছে যে, মহেঞ্জোদারো এবং আশেপাশের এলাকায় তাপপ্রবাহ কমে যাবে। তবে রাজধানী করাচি (পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর) সহ সিন্ধুর অন্যান্য অঞ্চলে আবারও তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।