বাংলাহান্ট ডেস্ক : পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের দৌরাত্ম্য এবং দূর্নীতিতে ওষ্ঠাগত বাংলার জেলাগুলি। প্রতিদিনই প্রায় শিরোনামে আসে এহেন কোনও না কোনও নেতার নাম। এমনকি বগটুইয়ের মতন নারকীয় হত্যালীলার পিছনে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ যে কারণই বলা হোক তাও এক পঞ্চায়েত উপপ্রধানই। রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের ক্রমাগত আকাশচুম্বী সন্ত্রাস, খুন এবং দূর্নীতির মধ্যে এক অন্য ছবি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে। উপপ্রধান হয়েও আজও নিজের অতীত পেশা মতই এলাকায় এলাকায় ঘুরে সবজি বিক্রি করেন উপপ্রধান।
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ১ ব্লকের বেরেন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতেরব তৃণমূল উপপ্রধান বিশ্বনাথ সিং। পেশায় দিনমজুর তিনি। তাঁর স্ত্রী মানবী সিংও দিনমজুরির কাজই করেন। দুই ছেলে নিয়ে মোট চারজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বিশ্বনাথ বাবুকে। তাই পেট চালাতে রোজ সকালে এলাকায় এলাকায় সবজি বিক্রি করেন তিনি।
প্রতিদিন ভোর তিনটেয় উঠে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান গুসকরা শহরে। সেখানে পাইকারি দোকান থেকে শাকসবজি কিনে এলাকায় সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তা। তারপর বাড়ি ফিরে এসে আবার যান ১৪ কিলোমিটার দূরের পঞ্চায়েত অফিসে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে হঠাৎই বিশ্বনাথ সিংকে প্রার্থী করে তৃণমূল। সবাইকে অবাক করে জিতেও যান তিনি। পান পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের পদ। তারপর থেকে গত চার বছর ধরে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা কোনও ব্যতিক্রম নেই এই রুটিনের।
বিশ্বনাথ বাবুর স্ত্রী মানবী দেবী জানিয়েছেন, ‘আগে আমার স্বামী শাক-সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পর মাঠে কাজে যেতেন। এখন উপ-প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর সবদিন মাঠের কাজে যেতে পারেন না। তবে আমাকে এখনও জনমজুরের কাজ করতে হয়।’ জনপ্রতিনিধি হয়েও সবসময় মানুষের পাশেই থেকেছেন বিশ্বনাথ বাবু। নিজে মাটির দেওয়াল দেওয়া অ্যাসবেসটস ছাউনির একটি ছোটো কুঠুরি ঘরে বাস করেই কখনও ভাবেননি ক্ষমতা প্রয়োগ করে আখের গোছানোর কথা। আজও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেই চলে তাঁদের পেট। রাজনৈতিক জগতে বিশ্বনাথ সিং-এর মত মানুষদের যে সত্যিই আজকের দিনে বড্ড বেশি করে দরকার, তা বলাই বাহুল্য।