বলিউডে জায়গা পেতে হয়ে গিয়েছিলেন নিঃস্ব, আট বছর ধরে স্বামী পঙ্কজ ত্রিপাঠীর খরচ বয়েছিলেন স্ত্রী

বাংলাহান্ট ডেস্ক: সোনার চামচ মুখে নিয়ে সকলে বলিউডে (Bollywood) পা রাখে না। এমনও অনেক অভিনেতা রয়েছেন যারা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে এই ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করেছেন। এমনি একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত তারকা হলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী (Pankaj Tripathi)। কোনো রকম ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড, গডফাদার ছাড়াই বলিউডে একজন স্বনামধন্য অভিনেতা হয়ে উঠেছেন তিনি। আর তাঁর এই খ্যাতির পেছনে সবথেকে বেশি যে মানুষটার কৃতিত্ব রয়েছে তিনি হলেন অভিনেতার স্ত্রী মৃদুলা ত্রিপাঠী (Mridula Tripathi)।

সিনেমা হোক কিংবা ওয়েব সিরিজ, সব ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন পঙ্কজ। বাস্তবে বলিউডের সবথেকে নম্র, ভদ্র স্বভাবের অভিনেতা হলেও কঠিন থেকে কঠিনতর চরিত্রেও সাবলীল ভাবে নিজের অভিনয় দক্ষতা ফুটিয়ে তোলেন তিনি। তবে নিজের এই খ্যাতির জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্বটাই তিনি নিজের স্ত্রী মৃদুলাকেই দেন।

Pankaj tripathi wife did this during his struggle days

পঙ্কজের সংগ্রামের সময়টায় মৃদুলাই ছিলেন তাঁর পাশে। ওই কঠিন সময়টায় শুধু তাঁকে মানসিক জোর দেওয়াই নয়, বছরের পর বছর ধরে পঙ্কজকে আর্থিক সাহায্যও করেছেন তাঁর স্ত্রী। এমন একজন মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা তো আপনা থেকেই আসে।

একবার এক সাক্ষাৎকারে নিজের স্ট্রাগলের সময়ের কথা তুলে ধরেছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। ২০০৮ সালে তিনি মুম্বই এসেছিলেন। আর ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ মুক্তি পায় ২০১২ সালে, যে ছবি পঙ্কজের কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অভিনেতা জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে তিনি কী করছিলেন তা কেউ জানত না।

সে সময়ে এক ছোট ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন পঙ্কজ। তাঁর স্ত্রীই বাচ্চাদের পড়িয়ে রোজগার করতেন সে সময়ে। বিশেষ চাহিদা ছিল না তাঁদের। স্ত্রীর জন্যই সংগ্রামের সময়টা অনেক সহজ হয়ে উঠেছিল পঙ্কজের কাছে। নয়তো তাঁকেও আন্ধেরি স্টেশনে রাত কাটাতে হত বলে মন্তব্য করেন অভিনেতা।

পঙ্কজ বলেন, ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত একটা পয়সাও তিনি রোজগার করেননি। সে সময়ে সংসারের সমস্ত খরচ খরচা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। শুধু তাই নয়, স্বামী হাল ছেড়ে দিলে তাঁকে মানসিক জোরও দিতেন মৃদুলা। পঙ্কজ জানান, ওই সময়টা তিনি আন্ধেরিতে ঘুরে ঘুরে সবাইকে অনুরোধ করতেন একবার অভিনয়ের সুযোগ দিতে। কিন্তু সে সময়ে কেউ পাত্তা দেয়নি তাঁকে। আজ তাঁর জন্য গাড়ির পার্কিংয়েও সিনেমার প্রস্তাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন নির্মাতারা।

পঙ্কজ এবং মৃদুলার প্রেম কাহিনিটাও বেশ মিষ্টি। তাঁদের প্রথম যখন আলাপ হয় তখন পঙ্কজ পড়েন ক্লাস ইলেভেনে আর মৃদুলার তখন ক্লাস নাইন। নিজের বোনের বিয়েতে মৃদুলাকে প্রথম দেখেন তিনি। প্রথম দেখাতেই পঙ্কজের মনে হয়েছিল, এই মেয়েটির সঙ্গেই তিনি নিজের গোটা জীবনটা কাটাতে চান। যদিও সে সময়ে মৃদুলার নাম, পরিচয় কিছুই তিনি জানতেন না।

Pankaj tripathi wife did this during his struggle days

আট বছর পর মৃদুলার বাবা মায়ের কাছে তাঁদের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান পঙ্কজ। কিন্তু দুই পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই বৈবাহিক ভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় ওই বিয়েটা নিয়ে কিছুটা আপত্তি ছিল দু পক্ষের। অন্যদিকে প্রথমে পঙ্কজের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীকালে নিজের অজান্তেই তাঁকে মন দিয়ে বসেন মৃদুলা। শেষমেষ দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০৪ সালে বিয়ে করেন তাঁরা।

পঙ্কজ জানান, তাঁর গ্রামে তিনি সবাইকে পণ নিয়ে বিয়ে করতে দেখেছিলেন। কিন্তু এই বিষয়টায় ঘোরতর আপত্তি ছিল তাঁর। তাই সে কথা তিনি আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছিলেন মৃদুলার বাবাকে। তবুও শ্বশুরমশাই তাঁর জন্য স্যুট বানালেও বিয়ের দিন সেটা না পরে সাধারণ কুর্তা আর ধুতি পরেই বিয়ে করেছিলেন পঙ্কজ।

Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর