বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরেই শিরোনামে রয়েছে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি (Primary Recruitment Scam)। ইতিমধ্যেই এই মামলায় নাম জড়িয়েছে একাধিক হেভিওয়েটের। চার্জ গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate) তথা ইডি। এই আবহেই বড় পদক্ষেপ নিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং বহিষ্কৃত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুন্তল ঘোষ।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Primary Recruitment Scam) বড় খবর!
জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল। সেই সঙ্গেই অব্যাহতির আবেদন জানিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থও। শুক্রবার বেশ কয়েকটি সংস্থা সহ মোট ১১ জন ইডির মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন বলে খবর। এদিকে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ার মাঝে এই পদক্ষেপের ফলে নয়া জটিলতা তৈরি হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, এদিন আদালতের সামনে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘আমার মক্কেলকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই সময় তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ টাকা ছিল। তবে ইডির দাবি, তাঁর অ্যাকাউন্টে ৯৯ লক্ষ টাকা রয়েছে। হেফাজতে থাকাকালীন কোথা থেকে, কীভাবে এই বাড়তি টাকা আমার মক্কেলের অ্যাকাউন্টে ঢুকল?’
কুন্তলের আইনজীবীর কথায়, ইডির (ED) দাবি, গ্রেফতারির পর কুন্তলের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। সেটার দায় তাঁর মক্কেল কেন নেবেন? সেই টাকা কোথা থেকে, কীভাবে, কেন এল সেটা কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে তদন্ত করে দেখতে হবে, বলেন তিনি। একইসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, যে সকল চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তোলা হয়েছে বলে ইডি দাবি করেছে, তাঁদের বয়ান রেকর্ড হয়েছে?
আরও পড়ুনঃ অ্যাকাউন্টে ঢুকবে বাড়তি ৭৫০০! সরকারি কর্মীদের জন্য দারুণ খবর! DA নিয়ে বিরাট আপডেট
বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা অভিযোগ, ইডির চার্জশিটের বক্তব্যেও অসঙ্গতি রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আগে ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির (Primary Recruitment Scam) অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে এই মামলার পঞ্চম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, সেই অঙ্কটা মাত্র ৪ কোটি! কুন্তলের আইনজীবীর প্রশ্ন, এটা কীভাবে সম্ভব? এছাড়াও ২০০৯ সালে কুন্তলের কেনা সম্পত্তিতে ২০১৪ সালের দুর্নীতির টাকা ব্যবহারের দাবি করা হয়েছে। সেটাও অসম্ভব বলে দাবি করেছেন তিনি।
কুন্তলের আইনজীবী এদিন আদালতে বলেন, ইডির দাবি, ২০১২-২০১৪ সালের চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে। তবে সেই সময় কুন্তল কোনও পদেই ছিলেন না। তিনি কীভাবে দুর্নীতিতে যুক্ত হবেন? প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর আইনজীবী। এমনকি কুন্তলের বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ হিসেবে যে সকল সম্পত্তির দলিল ইডির তরফ থেকে দেখানো হয়েছে, সেখানে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার আঙুলের ছাপ কিংবা সই নেই বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী। পাশাপাশি কুন্তলের স্ত্রী নিজের পূর্বপুরুষের জমি বিক্রি করে ২৪ লাখ টাকা দিয়ে একটি সম্পন্ন ক্রয় করেছিলেন। সেটাও কেন্দ্রীয় এজেন্সি বাজেয়াপ্ত করেছে। ফলে সব দিক বিবেচনা করে কুন্তলকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
কুন্তলের পাশাপাশি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলা (Primary Recruitment Scam) থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থও। তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য, ইডির ইসিআইআরে প্রাক্তন মন্ত্রী নাম নেই। হাইকোর্টের এই বিষয়ক নির্দেশেও তাঁর নাম নেই। এছাড়া যে অর্থ বা সম্পত্তি মিলেছে, সেটা কখনও নিজের বলে দাবি করেননি পার্থ এবং এই দুর্নীতি সম্বন্ধিত কোনও নথিতে তাঁর স্বাক্ষর অবধি পাওয়া যায়নি! তাহলে কীভাবে তাঁকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে?
পার্থ এদিন আদালতে জানান, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Primary Recruitment Scam) ২০২২ সালে যখন তাঁর বিরুদ্ধে ইসিআইআর করা হচ্ছে, সেই সময়ও তিনি রাজ্যের বিধায়ক ছিলেন। নিয়ম বলছে, এক্ষেত্রে তাঁকে অভিযুক্ত করতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ, ইডি তা নেয়নি। এছাড়া তাঁর বাড়ি থেকে সরাসরি কোনও অর্থ বা সম্পত্তির হিসেব মেলেনি। সেই সঙ্গেই প্রাক্তন মন্ত্রীর যে সকল সম্পত্তিকে ‘দুর্নীতির ফসল’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলির সঙ্গে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা সেটার প্রমাণ ইডি দিতে পারেনি।
পর্ষদের ক্ষেত্রে পার্থর দাবি, সেটি একটি স্বতন্ত্র সংস্থা, তা নিজস্ব নিয়মে চলে। প্রাক্তন মন্ত্রী আইনজীবীর দাবি, পার্থ শিক্ষামন্ত্রী থাকলেও সেখানে তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না। ফলে সব মিলিয়ে এই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন পার্থ।