পার্থ শান্তিনিকেতনের সাতটি বাড়ির দেখাশোনা করতেন ‘ভাগ্নে’ রাজীব, উঠে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য

বাংলাহান্ট ডেস্ক : মাঝে মধ্যেই অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতো বাড়ির সামনে। সবাই বলে ওটা নাকি মন্ত্রীর বাড়ি। প্রতিবেশিরাও তাই জানতেন। তাঁরা মন্ত্রীর আসা যাওয়াও নাকি ছিল ভালোই। তবে সেটা সন্ধ্যার পরে। আবার সকাল হওয়ার আগেই ফিরে যেতেন তিনি। তিনি বাংলার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)।

এরপরই শান্তিনিকেতনের সঙ্গে পার্থবাবুর সংযোগের কথাও উঠে আসছে ইডি সূত্রে। সেই সূত্রেই শনিবার প্রায় সারা দিনই চর্চায় থেকেছে শান্তিনিকেতনের ফুলডাঙা, প্রান্তিক, সোনাঝুরি, অ্যান্ড্রুজ পল্লি এলাকায় থাকা সাতটি মনোরম বাড়ি। যে বাড়িগুলিতে নাকি মাঝেমধ্যেই পার্থর যাতায়াত ছিল বলে স্থানীয় সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।

যদিও ওই বাড়িগুলি পার্থরই কি না, তার প্রমান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার মানুষ জানান, ওই বাড়িগুলি দেখভাল করতেন এক মহিলা, যিনি পেশায় অধ্যাপিকা। এখানে যাতায়াত ছিল তাঁরও। একটি বাড়ির কেয়ারটেকার বললেন, ‘আমরা তো বেতনভুক কর্মচারী। বেশি কিছু বলতে পারব না। তবে, পার্থবাবু মাঝেমধ্যেই আসতেন। এখানকার বাড়িগুলিতে রাত কাটিয়ে আবার ফিরে যেতেন কলকাতা।’ শান্তিনিকেতনে যে ঘনঘন যাতায়াত ছিল তৃণমূলের মহাসচিবের, তা অবশ্য এলাকার বাসিন্দারাই জানিয়েছেন।

এ দিন সকালে বোলপুর শান্তিনিকেতন এলাকায় পার্থবাবুর বাড়ি বলে পরিচিত বিশাল জায়গা নিয়ে উঁচু পাঁচিল ঘেরা বাংলোগুলির সামনে গিয়ে দেখা যায় ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে গেট। অনেক ডাকাডাকির পরে একমাত্র ফুলডাঙার বাংলো বাড়িটির কেয়ারটেকার বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিবেশীদের অনেকেই বলেন, ‘পার্থবাবু মাঝেমধ্যেই আসতেন এই বাড়িতে। তবে বেশিরভাগ সময়ই তিনি রাতে এসে আবার সকালেই ফিরে যেতেন। প্রচুর পুলিশি নিরাপত্তা ও গাড়ি দেখে আমরা আন্দাজ করতাম পারতাম উনি এসেছেন।’ প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও শান্তিনিকেতন ও বোলপুরের জামবুনির বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। দুর্নীতি করেই আজ উনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন। আমরাও চাই বোলপুর শান্তিনিকেতন এলাকায় ওঁর যত বাড়ি, সম্পত্তি রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।’ বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অষ্টম মণ্ডল বলেন, ‘এই সবই সাধারণ মানুষের টাকায় তৈরি। তাই আমরা চাই এই সমস্ত কিছুর তদন্ত হোক।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাও মেনে নেন, শান্তিনিকেতনে পার্থের বাড়ি আছে বলে তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, মন্ত্রী মাঝেমধ্যে আসতেনও সেখানে। কিন্তু তার ঠিক কতগুলো বাড়ি রয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

এই সব বাড়ি দেখাশুনা করার জন্য যে নামটি উঠে আসছে সেটি হল রাজীব দে। তিনিই ওইসব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন বলে জানান এলাকাবাসী। সবকিছু কিনেছিলেন এই রাজীবই।

গোটা শান্তিনিকেতনে এখন একটাই নাম রাজীব দে। এলাকাবাসীর দাবি, নিজেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নে বলে পরিচয় দিতেন এই রাজীব দে। গোয়ালপাড়া এলাকায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তিতলি নামে একটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির সামনে লেখা রয়েছে রাজীব দের নাম।

স্থানীয়রা জানান, একসময় প্রায়ই আসতেন পার্থর চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নে বলে পরিচয় দেওয়া রাজীব। গত ২ মাস তিনি আর আসছেন না। অনেকের দাবি, এই রাজীব দে-কে জেরা করলেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।

Sudipto

সম্পর্কিত খবর