টাকা নিয়ে চাকরি না দিয়ে ২৯ বিঘায় খামারবাড়ি তৈরি! খোঁজ মিলল আরও এক পার্থ ঘনিষ্ঠর

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বেড়েই চলেছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ‘ঘনিষ্টের’ তালিকা। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্নীতির খতিয়ানও। ২০২১ সালের জুলাই থেকেই নাকি সপরিবার ফেরার! কিন্তু মজার বিষয় গত বছর নভেম্বর মাসে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া অঞ্চলের মহুলবনি মৌজায় বিরাট খামারবাড়িতে জাঁকজমক করে কালীপুজো করেন অতনু গুছাইত। কোলাঘাটের তৃণমূল নেতা অতনুর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে বহু আগেই। গত মাসে অতনুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে তমলুক আদালত।

অতনু, তাঁর স্ত্রী মানসী এবং অতনুর ভাই শান্তনু (লাল) এককালে নিজেদের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে দাবি করতেন। স্থানীয় সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ঝাড়গ্রামের খামারবাড়িতে গত বছরের কালীপুজোয় জঙ্গলমহলের এই জেলার কয়েকজন তৃণমূল নেতা-নেত্রীও উপস্থিত আছেন। সোমবার ওই খামারের দুই কর্মীও স্বীকার করেন, গত বছর মালিকরা এখানে কালীপুজো করেন। বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন অতিথিও এসেছিলেন।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরই ইডির তল্লাশি শুরু করে জেলায় জেলায় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিপুল সম্পত্তির। এলাকার তৃণমূল নেতারা মেনে নেন, ২০১৩ সালে স্থানীয় কুণ্ডু পরিবারের কাছ থেকে অতনু গুছাইত মহুলবনি মৌজায় মা মিতা ও ভাই শান্তনুর নামে ২৯ বিঘা জমি কেনেন। দু’বছর ধরে সেখানে তৈরি হয় বিরাট খামার বাড়ি। এর ভিতরে রয়েছে ফল ও ফুলের গাছ, ৭টি পুকুর, অতিথিশালা, গোরুর খোঁয়াড়।

‘এবি গ্রিন ফার্ম হাউস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই খামারের মূল দরজায় এখন ঝোলে তালা। অনেক ডাকাডাকির পর ছোট দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন খামার দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মী। একজন মুড়াকাটি গ্রামের অচিন্ত্য চালক ও অপরজন বাঁধগোড়ার রবি খামরুই। তাঁরা জানান, বছর খানেক ধরেই বন্ধ তাঁদের বেতন। তবু ৭টি গরু আর ৫টি অ্যালসেশিয়ান কুকুরের জন্যই তাঁরা এই খামারের দেখভাল করছেন। গরুর দুধ বিক্রি করে গোরুর খাদ্য এবং কুকুরদের জন্য মাংস কেনা হয়। বছর দেড়েক আগে পুকুরের সব মাছ ধরে ঝাড়গ্রাম বাজারে বিক্রি করে দেন মালিকরা। কয়েক বছর আগেও দৈনিক মজুরিতে গ্রামের অনেক লোক খামারে কাজ করতেন। এখন সে সব বন্ধ।

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে একটি অসম্পূর্ণ মন্দির রয়েছে ভিতরে। দুই কর্মী জানান, এই বছরই কালীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা ছিল। খামার যখন জোরকদমে চলত, তখন নিজের স্ত্রীকে নিয়ে আসতেন অতনু। আসতেন অতনুদের মা মিতাও। রাতে যদিও কর্মীরা থাকতেন না। তখন অ্যালসেশিয়ানগুলিই পাহারা দিত খামারের। তবে খামারের ম্যানেজার কোলাঘাটের বাসিন্দা কানাই প্রামাণিক সব সময় থাকতেন। নিখোঁজ তিনিও।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ঝাড়গ্রামেও চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছে গুছাইত পরিবার। টাকা তুলতেন খামারেরই এক কর্মী, তাঁর বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। জানা যাচ্ছে, ওই কর্মীর স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী-সহ কয়েক জন আত্মীয় সরকারি ডি চাকরিও পেয়েছেন। বাঁধগোড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শঙ্কর বেজ বলেন, ‘এই খামাড়ের মালিক মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ বলে শুনেছিলাম। তাই আর মাথা ঘামাইনি।’

প্রসেনজিৎ কুইলা নামে এক অভিযোগকারী বলেন, ‘আমার বাড়ির চার জনের চাকরির জন্য অতনুকে টাকা দিয়েছিলাম। চাকরি আর হয়নি। কোলাঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কিছুই লাভ হয়নি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’

ad

Sudipto

সম্পর্কিত খবর