বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের পা রাখার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ২০২৩ সালের ওডিআই এশিয়া কাপ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। বিসিসিআইয়ের তরফ থেকে রাজ্য সংস্থাগুলোকে পাঠানো চিঠিতে এটা স্পষ্ট করে বলা ছিল যে আগামী বছর ভারতের চারটি বড় বহুদলীয় টুর্নামেন্টে অংশ নেবে তার মধ্যে ২০২৩ এশিয়া কাপও রয়েছে। ফলে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতকে খেলতে দেখতে পাওয়ার একটা সম্ভাবনার বুক বাঁধছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু জয় শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে ২০২৩ এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করতে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখবে না রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট দল। তিনি জানান যে এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করার প্রস্তাব তারা তুলবেন যেমনটা আগেও আয়োজিত হয়েছে। বিসিসিআইয়ের কাছে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, কোনও অবস্থাতেই তারা পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখবে না।
২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে জঙ্গিহানার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে ছিল যার প্রভাব পড়েছিল ক্রিকেটেও। ওই ঘটনার পর থেকে কেবলমাত্র একটি ওডিআই ও একটি টি-টোয়েন্টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছিল ভারত ও পাকিস্তান। ওই সিরিজটি আয়োজিত হয়েছিল ২০১২ সালে ভারতের মাটিতে। সেবার ওয়ান ডে সিরিজ পাকিস্তান ভারতের মাটি থেকে জিতে ফিরেছিল, কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ড্র হয়েছিল।
দুই দেশ এখন শুধুমাত্র কোনওরকম বহুদলীয় প্রতিযোগিতাতেই একে অপরের মুখোমুখি হয়। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না খেললেও ভারতীয় দলের পাকিস্তান যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল প্রায় ১৫ বছর পরে। কিন্তু বোর্ড সচিব জয় শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “দল পাকিস্তানে যাবে কিনা সেটা ঠিক করবে সরকার। সুতরাং এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি পরের এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সরানোর, যেখানে ভারতের অংশগ্রহণ করতে কোন সমস্যা থাকবে না।”
প্রসঙ্গত বিসিসিআই সচিব হওয়ার পাশাপাশি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন জয় শাহ। কাজেই এশিয়া কাপ কিছুটা চেষ্টা করলে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করার ব্যবস্থা তিনি করেও ফেলতে পারেন। অর্থাৎ টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব থাকবে পাকিস্তান বোর্ডের হাতেই, কিন্তু টুর্নামেন্টটি পাকিস্তানের মাটিতে না হয়ে অন্য কোনও দেশে হবে। ঠিক যেমনভাবে করোনার কারণে বিসিসিআই ভারতের বদলে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মাটিতে।
এই কথা জানার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানের সমর্থকরা। পাক ক্রিকেটপ্রেমীদের দাবি যদি ভারত সত্যি সত্যি এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানের মাটিতে পা না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ২০২৩ সালের আইসিসি আয়োজিত ওডিআই বিশ্বকাপ বয়কট করবে তাদের দেশ। তারপর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও এই ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, “এসিসি বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি সমর্থন পেয়েই পাকিস্তানকে এসিসি এশিয়া কাপে আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এসিসি বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পরে, জয় শাহের এসিসি এশিয়া কাপ স্থানান্তরের বিবৃতিটি স্পষ্টতই একতরফাভাবে দেওয়া হয়েছে। এটি সেই দর্শন ও চেতনার অনুসারী নয় যার জন্য ১৯৮৩ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল। এই ধরনের বিবৃতিগুলির সামগ্রিক প্রভাবস্বরূপ এশিয়ান এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্প্রদায়গুলিকে বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালের আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপ এবং ২০২৪-২০৩১ সময়কালের মধ্যে ভারতে ভবিষ্যতের আইসিসি ইভেন্টগুলিতে পাকিস্তানের ভারত সফরেও এই বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। পিসিবি এখন পর্যন্ত এসিসি সভাপতির বক্তব্যের বিষয়ে এসিসির কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পায়নি। পিসিবি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে অনুরোধ জানাচ্ছে যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার বোর্ডের জরুরি সভা আহ্বান করা যায়।”
যদিও তেমন কোনও সভা আয়োজিত হয়নি। কিন্তু রামিজ রাজা জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা তাদের অবস্থান থেকে সড়ছেন না। এইমুহূর্তে তাদের মূল লক্ষ্য পাকিস্তান ক্রিকেটকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা। তার জন্য পাকিস্তান ক্রিকেটারদের ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। চলতি বছরে এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল পাকিস্তান। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই হারের মুখ দেখতে হয়েছিল তাদের।