গঙ্গা দূষিত হলে মাসে প্রতি নালাপিছু দশ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত

 

 

বাংলা হান্ট ডেস্ক: শহরের নোংরা দূষিত জল, নালার মাধ্যমে গঙ্গায় মিশলেই নালাপিছু দশ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তাও সেটা এককালীন নয়, প্রতি মাসে প্রতি নালার জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে স্থানীয় পৌঢ়সভাগুলিকে।

 

কিছুদিন আগেই এই নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু এই নতুন নিয়ম এখনই কার্যকর করা হচ্ছে না। আগামী বছরের ১ জুলাইয়ের আগে নোংরা জল ফেলা বন্ধ করতে হবে, এমনটাই নির্দেশ আদালতের। রাজ্য তথা কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, গঙ্গাকে ‘পবিত্র’ রাখতেই এইরকম পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, এই পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি ছিল।

 

পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার পাশে কলকাতা, হাওড়া, বালি, চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, ব্যারাকপুর, ভদ্রেশ্বর, বজবজ, চন্দননগর, ডায়মন্ড হারবার, গারুলিয়া, নবদ্বীপ, হলদিয়া, উলুবেড়িয়া, কৃষ্ণনগর, মহেশতলা, কাঁচড়াপাড়া-সহ রাজ্যের ৪৪টি পুরসভা রয়েছে। ওই সব এলাকার নোংরা, দূষিত জল, নিকাশি নালার মাধ্যমে গিয়ে মিশছে গঙ্গায়।

IMG 20190929 WA0038

 

নগরোন্নয়ন দফতর বিষয়টি নিয়ে এখন উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই পুরসভাগুলিকে সতর্ক করার কাজ শুরু করেছে তারা। নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিকের থেকে জানা যায়, ‘‘জরিমানার পরিমাণ এতটাই যে, সময়ে ব্যবস্থা না নিলে পথে বসে যেতে পারে অনেক পুরসভা।’’

 

এ নিয়ে পরিবেশ ভবনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি প্রয়োজনীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষে সদস্য সচিব রাজেশ কুমার বিষয়টি  জানিয়ে ওই গঙ্গা সংলগ্ন ৪৪ টি পুরসভার মেয়র, চেয়ারপার্সন, কমিশনারদের চিঠি পাঠিয়ে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু সেখানে এসেছিলেন মাত্র ২১টি পুরসভার প্রতিনিধি। কিন্তু সেখানেও তাঁদের অধিকাংশই অ্যাসিস্ট্যান্ট ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদা প্রাপ্ত। নগরোন্নয়ন এবং পরিবেশ দফতরের কর্তারা মনে করছেন, পুরসভাগুলি বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না।

নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, কোন পুরসভার কোন নিকাশি নালার জল কোন পথে গঙ্গায় গিয়ে মিশেছে, তার বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করতে হবে। সেই নোংরা জল পরিস্রুত করে তবেই তা ফেলা যাবে গঙ্গায়।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, ‘‘হাজির থাকা পুরসভার প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে গঙ্গায় নোংরা জল ফেলতে দেবেন না। গঙ্গা দূষণমুক্ত করা জরুরি।’’ সেই কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে, এমনই নির্দেশ পরিবেশ আদালতের। বৈঠকে জানা যায়, কলকাতা পুরসভার প্রায় ৫০টিরও বেশি নালা বা খাল দিয়ে নোংরা জল গঙ্গায় মিশছে। চুঁচুড়া পুরসভার এইরকম ৪২টি নালা রয়েছে। সময়ের মধ্যে কাজ না হলে প্রতি মাসে জরিমানা দিতেই বেরিয়ে যাবে কয়েক কোটি টাকা। আর জরিমানা দেওয়ার বিষয়টি খুব একটা সম্মানের ব্যাপারও নয়। রাজ্য সরকারের কাছেও এটা বড় লজ্জার বিষয়।

নগরোন্নয়ন দফতরের একাধিক আধিকারিকের মতে, নিকাশি শোধনকেন্দ্র করতে প্রচুর সময় লাগে। সেই সময় আর হাতে নেই। আপাতত অন্তর্বর্তী কয়েকটি পদক্ষেপ হিসেবে নালার নোংরা জল ‘ফাইটোরেমিডিয়ান’ এবং ‘বায়োরেমিডিয়ান’ পদ্ধতিতে শোধন করার ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। তা হলে পরিবেশ আদালতকে অন্তত বলা যাবে, কাজ শুরু হয়েছে। কারণ, আগামী নভেম্বর থেকে তা শুরু না করা গেলে রাজ্য সরকার এখানেই মাসপিছু নালাপ্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা করে কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জমা দিতে বাধ্য থাকবে।

সম্পর্কিত খবর