রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দকে নিয়ে ঠাট্টা! হিন্দিভাষী সাধুর অপব্যাখ্যায় তুলকালাম, সাজা দিল ISKCON

বাংলা হান্ট ডেস্ক: সেই কোন আদিকাল থেকে চলে আসছে রামকৃষ্ণ মিশন (Ramakrishna Mission) আর ইসকনের (International Society for Krishna Consciousness) দ্বন্দ্ব। সোশ্যাল মিডিয়া হোক কী সম্মেলন, কখনও ইসকন তোপ দাগেন রামকৃষ্ণ মিশনকে তো কখনও মিশন কটাক্ষ করে বসেন ইসকনকে। সম্প্রতি আরও একবার মাথাচাড়া দিয় উঠেছে সেই দ্বন্দ্ব। রামকৃষ্ণদেব এবং স্বামী বিবেকানন্দর (Swami Vivekananda) দর্শনকে যেভাবে আক্রমণ করলেন ইসকনের নবীন সাধু অমোঘ লীলা (Amogh Lila), তাতে বিতর্ক চরম আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি ভক্তদের হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে কখন যে শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন তা হয়ত তিনিও খেয়াল করেননি। রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বাণীর যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন তাতে হেসে লুটোপুটি খেয়েছে গোটা সোশ্যাল মিডিয়া। এই নিয়ে সাধু অমোঘ লীলা বলেন, ‘যে রাস্তা দিয়ে ইচ্ছে যাওয়ার বেরিয়ে পড়, গন্তব্য একই হবে। সেটা কখনই হয় না। আমি যদি মায়াপুর যেতে চাই, তবে ডান-বাম-আগে-পিছে যে কোনও রাস্তা ধরে যাওয়া সম্ভব নয়। একটি নির্দিষ্ট রাস্তা ধরতে হবে।’

শুধু পরমহংসদেব নন, স্বামীজিকেও নিশানা বানিয়েছেন তিনি। বিবেকানন্দের বাণী প্রসঙ্গে অমোঘ লীলা বলেন, তিনি বিবেকানন্দকে সিদ্ধ পুরুষ মনে করেন না। অমোঘ লীলার ব্যাখ্যা, “কোনও সিদ্ধপুরুষ কখনও কোনও পশু মেরে খাবেন না। বিবেকানন্দ যদি মাছ খান তবে কীভাবে তিনি সিদ্ধপুরুষ হবেন?” পাশাপাশি তরুণদের মেরুদণ্ড গঠনে খেলাধূলার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা দেখাতেন স্বামীজি। আর তাই গীতাপাঠের চেয়ে খেলাধূলার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন।

amogh lila prabhu 1024x576

ইসকনের সাধু এই বিষয়েও আপত্তি দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “খেলাধূলা করাই মনের বিকাশের জন্য শেষ কথা হতে পারে না। গীতা পাঠ করাটা অত্যন্ত জরুরি।” অমোঘ লীলার এহেন মন্তব্যে বিরক্ত হয়েছেন অনেকেই। স্বামীজির অনুগামীরা তো বটেই, পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষও। নেটিজনদের বক্তব্য, হিন্দু ধর্মের প্রসারে বিবেকানন্দের ভূমিকাকে ছোট দেখাতে গিয়ে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছেন তিনি।

নেটিজনদের একাংশের ধারণা, ইসকনের সাধুর এই বক্তব্যে ইসকন বিরোধী মানুষের সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবেনা। কারণ হিন্দু সমাজে রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দ হলেন একটা আবেগ। বিষয়টির বিরোধীতা করেছেন শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ-ও। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘ইস্কন আমাদের প্রিয়। কিন্তু তার এই বাচালের অসভ্যতা বন্ধ করুন তারা। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দকে অপমান করে এসব কথা বললে বরদাস্ত করা হবে না।’ নেটিজেনদের একাংশ তো হিন্দিভাষী ব্রহ্মচারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।

তারপরেই নড়েচড়ে বসেছে ইসকন। সূত্রের খবর, হিন্দিভাষী ঐ ব্রহ্মচারী অমোঘ লীলা স্বামীকে এক মাসের জন্য মথুরায় পাঠানো হয়েছে। সংস্থার তরফে রাধারমণ দাস এই খবর জানিয়ে বলেছেন, “নিজের কৃতকর্মের জন্যে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন অমোঘ লীলা স্বামী। এই এক মাস তাকে যাবতীয় প্রবচন দেওয়ার কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়বে না প্রত্যাহার করা হবে, শুদ্ধিকরণ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

 

 

Moumita Mondal
Moumita Mondal

মৌমিতা মণ্ডল, গ্র্যাজুয়েশনের পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত। প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর