হারিয়েছেন বাবাকে, সংসার বাঁচাতে চায়ের দোকান খুললেন রামপুরহাটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়া

বাংলাহান্ট ডেস্ক: তিন বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন ইশা ও তাঁর পরিবার। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি। মা ছাড়াও বারিতে রয়েছে এক ভাই ও এক বোন। দু’জনেই স্কুল পড়ুয়া তাঁরা। অসময়ে বাবাকে হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন তাঁরা। তাই সংসার, নিজের ও ভাইবোনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ইশা। 

সংসার চালাতে রামপুরহাট (Rampurhat) পৌরসভা ও গার্লস হাই স্কুলের সামনে চায়ের দোকান (Tea shop) খুলেছেন কলেজ ছাত্রী ইশা গুপ্তা। নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সের ছাত্রী সে। তাঁদের তেমন কোনও সম্বল নেই। একটি ভগ্নপ্রায় বাড়ি রয়েছে। তাঁরা থাকেন  রামপুরহাট পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ড মহাজনপট্টি এলাকায়। বাবা সুনীল গুপ্তা তিন বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।

Isha Gupta tea stall

আগেও তেমন স্বচ্ছল ছিল না পরিবারটি। সুনীলবাবুর অকাল প্রয়াণ যেন আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয় পরিবারটিকে। প্রয়াত সুনীল গুপ্তা পেশায় একজন লেবু বিক্রেতা ছিলেন। তেমন সঞ্চয় করে যেতে পারেননি। পরিবারে দেখা দেয় চরম অর্থাভাব। সংসারের এমন দুরবস্থা দেখে মা মধু গুপ্তার পাশাপাশি চিন্তায় পড়েন বাড়ির বড় মেয়ে ইশা।

পরিবারকে বাঁচাতে একমাত্র রাস্তা ছিল ব্যবসা। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ইশা। এদিকে ভালো একটি ব্যবসা দাঁড় করাতেও মোটা পুঁজির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই অর্থ তাঁদের ছিল না। কিন্তু তাতে থেমে থাকেননি তিনি। প্রথমে শুরু করেন জেরক্সের দোকানে সাদা কাগজ বিক্রি করে। তাতে যথেষ্ট আয় হচ্ছিল না। এই সময় তিনি ইউটিউবে এমবিএ চায়েওয়ালার (MBA Chaiwala) ভিডিও দেখেন। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পান।

2

তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে অল্প পুঁজিতে চায়ের দোকান খুলবেন। পরিচিত ব্যক্তি সমীরণ মণ্ডল ইশাকে নিজের বন্ধ থাকা একটি অস্থায়ী দোকান দেন। সেখানেই ইশা শুরু করেন নিজের চায়ের দোকান। দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এলাকায় পুরোনো অনেক চায়ের দোকান রয়েছে। তবুও অধিকাংশ চা প্রেমী মানুষ ইশার দোকানেই ভিড় জমাচ্ছেন। যা আয় হচ্ছে তা দিয়েই চলছে সংসার। আগামী দিনে এটিকেই একটি বড় ব্র্যান্ড করার চিন্তা রয়েছে তাঁর।

পড়াশোনার ফাঁকে সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা ও বিকেলে তিন ঘণ্টার জন্য দোকান খুলছেন ইশা। তার মাঝেই দিনে একবার করে পৌঁছে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেরক্সের দোকানে। কাগজ বিক্রির টাকা সংগ্রহ করতে। ইশার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁর দোকানে আসা ক্রেতা থেকে স্থানীয় মানুষজন। বাবাকে হারিয়েও থেমে না থেকে নিজের চেষ্টায় এমন লড়াই থেকে অনেকেই অনুপ্রেরণা পাবেন বলে মত তাঁদের।

Subhraroop

সম্পর্কিত খবর