বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক:
“ব্রুনো ব্রুনো ব্রুনো
হি কেম ফ্রম স্পোর্টিং লাইক ক্রিশ্চিয়ানো,
হি গোজ লেফট, হি গোজ রাইট
হি মেড ডিফেন্স লুক সাইট,
হি ইজ দ্য পর্তুগিজ ম্যাগনিফিকো”
এই গান গেয়েই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্তরা ব্রুনোকে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন যখনই তিনি লাল জার্সি গায়ে চাপিয়ে রেড ডেভিলসদের হয়ে মাঠে নামেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতন তিনিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পা রেখেছিলেন স্পোর্টিং লিসবন নামের পর্তুগালের ক্লাব থেকে। যখন ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন ব্রুনো, তখন জীবনের সেরা ছন্দে ছিলেন তিনি। কিন্তু গত ৮-৯ মাসে নিজের সেরা পারফরমেন্স টা করতে পারেননি বলে অনেকেই তার সমালোচনা করেছিল।
কিন্তু ঠিক সময় মত ফর্মে ফিরে এখন পর্তুগালকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বরাবরই অভিযোগ ছিল যে তিনি ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত কিন্তু দেশের জার্সি গায়ে নিজের সেরাটা দিতে পারেন না। কিন্তু চলতি বছরে সেই পরিসংখ্যান বদলে দিয়েছেন তিনি। মার্চ মাসে পর্তুগাল যখন বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলছিল তখন নর্থ ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে দেশকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ঘানার বিরুদ্ধে দুটি অ্যাসিস্ট করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর গতকাল রাতে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে করলেন জোড়া গোল। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে যদিও কৃতিত্ব অনেকটাই নিয়ে যাবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রোনাল্ডোকে লক্ষ্য করে ব্রুনোর বাড়ানো বল সরাসরি গোলে ঢুকে যায়। পর্তুগিজ মহাতারকা লাফিয়েছিলেন হেড দেওয়ার জন্য। ভিডিওর হাইলাইটস দেখে মনে হবে বল রোনাল্ডোর চুল স্পর্শ করেছিল। কিন্তু নিখুঁত প্রমাণ না থাকায় গোলটি যায় ব্রুনোর খাতায়। তবে রোনাল্ডো যদি ওখানে না থাকতেন এবং হেডের জন্য নাজাপাতেন তাহলে গোলরক্ষক হয়তো ক্রসটি সহজেই ধরে ফেলতো। তাই এক্ষেত্রে কৃতিত্ব অনেকটাই রোনাল্ডোর।
এরপর ম্যাচের অন্তিম লগ্নে পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। রোনালদোকে তখন বেশ কিছুটা সময় বিশ্রাম দেওয়ার জন্য তুলে নিয়েছিলেন পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। ঠান্ডা মাথায় পেনাল্টি থেকে গোলে পরিণত করেন ব্রুনো। এরপরে নিজেকে সম্পূর্ণ করার সুযোগও পেয়েছিলেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। কিন্তু একবার পোস্ট এবং একবার উরুগুয়ের গোলরক্ষকের দুর্দান্ত সেভে তার হ্যাটট্রিকটি অধরা থেকে যায়। সেই সঙ্গে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে একাধিকবার পর্তুগালের পতন রোধ করেছেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা যিনি আগের ম্যাচে একটি বাচ্চাদের মত ভুল করে সমালোচিত হয়েছিলেন।
কালকে উরুগুয়েকে হারিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের বদলা নিল পর্তুগাল। সেবার শেষ ১৬ পর্যায়ে এডিনসন কাভানির জোড়া গোলে ভর করে পর্তুগালকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল উরুগুয়ে। চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ অমীমাংসিতভাবে শেষ করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে রোনাল্ডোদের কাছে হেরে ভয়ানক চাপে পড়ে গেল উরুগুয়ে। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ঘানা। নকআউটে যাওয়ার আশা বাচিয়ে রাখতে গেলে আফ্রিকান দেশটিকে হারাতেই হবে সুয়ারেজদের। আর ফুটবলপ্রেমীদের যদি ২০১০ বিশ্বকাপের কথা মনে থাকে তাহলে সকলেই বুঝতে পারবেন যে উরুগুয়ে এবং থানা ম্যাচটি কতটা উত্তেজনামূলক হতে চলেছে এবং সেটি শুধুমাত্র মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে নয়। সেবার হাত দিয়ে বল আটকে নিজে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন সুয়ারেজ। সেই হ্যান্ডবল থেকে পাওয়া পেনাল্টি ঘানা মিস করেছিল এবং সেমিফাইনালের টিকিট হাতছাড়া করেছিল। অপরদিকে ব্রাজিল এবং ফ্রান্সের পর তৃতীয় দল হিসেবে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেই নকআউট নিশ্চিত করে ফেলেছে পর্তুগাল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে না হারলে গ্রুপটির সেই থাকবে তারা এবং শেষে ব্রাজিলের মতো কঠিন প্রতিপক্ষকে আপাতত এড়িয়ে যেতে পারবে ইউরোপের দলটি।