বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়া কিভাবে মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে তার উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে আরও একবার। পৌলমী অধিকারী (Paulami Adhikary), ভারতের হয়ে একাধিক পর্যায়ে মাঠে নামা এই মহিলা ফুটবলারকে দুদিন আগেও কেউ চিনত না। কিন্তু সম্প্রতি তার একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তিনি এখন সকলের নজরে উঠে এসেছেন। এমনকি তার ডাক এসেছে আইএফএ (IFA) থেকেও।
এতদিন পরিশ্রম করে পয়সা রোজগার করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু গত দুদিন ধরে কেবলমাত্র একাধিক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তিনি। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Cristiano Ronaldo) ভক্ত। বাড়ির দেওয়ালে আটকানো রয়েছে রোনাল্ডোর ২০১০ বিশ্বকাপে (South Africa World Cup 2010) পর্তুগালের হয়ে স্পেনের বিরুদ্ধে খেলা ম্যাচের একটি ছবি। তার আদর্শ যেমন অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি থেকে লড়াই করে বিশ্বের সেরা ফুটবলারে পরিণত হয়েছেন, এখন পৌলমীর সামনেও সুযোগ রয়েছে এই ভাইরাল ভিডিওর পর নিজেকে আলাদা উচ্চতায় তুলে নেওয়ার।
যদিও আইএফএ তাকে ঠিক কেন ডেকে পাঠিয়েছে সেই ব্যাপারে কোনও সচিব অনির্বাণ দত্ত কোন উত্তর দেননি। তবু আশা করেই যায় ভালো সময়ই এবার অপেক্ষা করছে পৌলমীর জন্য। ছোটবেলা যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকায় মেয়েদের ফুটবল খেলার ঘটনা খুব একটা ভালো চোখে দেখা হতো না। তাই ছেলেদের মত সাজসজ্জা করেই ফুটবল খেলতে যেতেন। ধরা পরার পরে বাবার কাছে ভালোরকম বকুনিও খেয়েছিলেন।
ভাইরাল ভিডিওটিতে যদি জানিয়েছিলেন যে একজন মেয়ে বলে তার যেমন অবস্থা হয়েছে তেমনটা যেন আর কারোর সাথে না হয়। পরবর্তীতে আরো জানিয়েছেন যে তার দেখাদেখি তার এলাকায় এখন মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তাকে যেমন প্রাথমিকভাবে কোথাও সুযোগ দেওয়া হয়নি, এখন তেমনটা হয় না। এটা অনেকটা বড় প্রাপ্তি তার কাছে। তিনি এটাও জানিয়েছেন যে তার ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে নানান রকম কাজের অফার আসছে এবং অনেকে আর্থিকভাবেও পাশে দাঁড়াতে চাইছেন।
তার মা জানিয়েছেন যে কিভাবে মেয়ে ফুটবল খেলে বাড়ি ফেরার পর যখন খাওয়ার চাইতো তখন উপযুক্ত খাওয়ার মেয়ের মুখে তুলে দিতে না পারার জন্য অনুশোচনায় ভুগতেন। টিভিতে ফুটবলারদের রোজগারের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেখে অনেকেই ভাবতেন যে তার মেয়ে ফুটবল যখন খেলছে তখন পয়সা রোজগার শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তেমনটা হয়নি। পৌলমীর দিদির বিয়ে দেওয়ার পর গাড়িচালক বাবা সংসার টানতে পারছিলেন না একার কাঁধে। তাই বাধ্য হয়েই জ্যোমাটোতে ডেলিভারি গার্লের কাজ করতে হয়েছে তাকে। পৌলমের ফুটবল হওয়ার স্বপ্ন এই কারণে বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। এমনকি এখন তার সংগ্রামের গল্প ভাইরাল হওয়ার পরেও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছেন তিনি।