বাংলাহান্ট ডেস্কঃ সালটা ছিল ১৯৮৪, দিনটা ৩১ শে অক্টোবর। কলকাতা থেকে দিল্লী গামী ইণ্ডিয়ান এয়ার লাইন্স ফ্লাইটে প্রণব মুখোপাধ্যায় (Pranab Mukherjee), রাজীব গান্ধী, শীলা দীক্ষিত সহ বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আচমকাই আড়াইটের সময় রাজীব গান্ধী বিমানের ককপিট থেকে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু সংবাদ শোনালেন। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা ভারত জুড়েই।
এই শোক সংবাদ পেয়ে নিজেকে সামলাতে না পেয়ে বিমানের বাথরুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বেরিয়ে বিমানের পেছনের দিকের সিটে বসে সকলের অগোচরেই কান্নার মাধ্যমে নিজের দুঃখ হালকা করতে থাকেন। কিন্তু শোনা যায়, তাঁর এই আচরণকে কংগ্রেস মধ্যস্থ তাঁর বিরোধীরা কিছুটা অন্য ভাবেই পেশ করে। যার অর্থ দাঁড়ায়, তিনি রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধীর সমস্ত অন্তিম কার্য সম্পন্ন করে দেশের প্রধান মন্ত্রী পদের নির্বাচনের বিষয়ে রাজীব গান্ধী যখন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের থেকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে, তখন তিনি বরিষ্ঠতার উপরই বেশি জোর দেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকেই পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী পদ লাভ করার ইচ্ছা রূপে পেশ করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর প্রধান সচিব পি সি আলেকজান্ডার নিজের আত্মকথা ‘Through The Corridors of Power – An Insider’s Story‘-তে পরিষ্কার ভাবে লিখে গেছেন, ‘যখন রাজীব গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছিল, তখন সে বিষয়ে সর্বপ্রথম প্রণব মুখোপাধ্যায় জোরালো সমর্থন করেছিলেন’। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর, রাজীব গান্ধীর নির্বাচিত মন্ত্রী মন্ডলে এমনকি কংগ্রেস দলেও জায়গা হয়নি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের।
১৯৮৬ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি নিজের একটি পৃথক দল রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস গঠন করেন। সোনিয়া গান্ধী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংকে নির্বাচন করেন, তখন দ্বিতীয়বারের জন্য এই মহান মানুষটাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ লাভের আশা ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু ভারতের এই মহান ব্যক্তিত্ব কোনভাবেই এই নির্বাচনের জন্য কোনদিন কোন প্রতিবাদ করেননি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এই মহান মানুষটি তখন কাউকে দোষারোপ না করে শুধু বলে গেছেন, ‘আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের সিংহভাগটাই রাজ্যসভায় কাটিয়েছি। হিন্দি বলতেও আমার কিছুটা সমস্যা হয়। এমনকি গৃহরাজ্যে কোনদিন কংগ্রেসকে আমি জয় এনে দিতে পারিনি’। এরপর একদিন মজার ছলেই তার কাছের মানুষদেরকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো আসবে যাবে, তবে আমি চিরকাল ‘PM’ (Pranab Mukherjee)ই থাকব’।