বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) নাম জড়িয়েছে বহুদিন আগেই। এবার চাকরি বিক্রির ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়কে (Prasanna Roy) নিয়ে বিস্ফোরক ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির দালাল প্রসন্নকে নিয়ে আদালতে বিস্ফোরণ ঘটালো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। কৃষিকাজের সূত্রে আখ, পেঁপে, কলা, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, বিন্স, সর্ষে, নারকেল চাষ করে কয়েক বছরে ২৬ কোটি টাকা রোজগার করেছেন প্রসন্ন।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানাল, অভিযুক্ত প্রসন্ন জানিয়েছেন চাষবাসের মাধ্যমেও গত কয়েক বছরের ২৬ কোটি টাকা আয় করেছেন। রোজগারের উৎস হিসেবে জানিয়েছেন কলা, ক্যাপসিকাম, আখ, টম্যাটো, নারকেল, সর্ষে এসবের নাম। যদিও প্রসন্নর এই দাবি হাওয়ায় উড়িয়ে পাল্টা ইডির কথা, প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থার অধীনে যে সমস্ত জমি রয়েছে, তাতে কোনও চাষই হয়নি।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থায় ২৬ কোটি এক লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৭২ টাকার হদিস পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই নিয়ে প্রসন্নের যুক্তি, কৃষিকাজ করেই এই বিপুল টাকা আয় করেছেন তিনি। চার্জশিটে ইডির দাবি, প্রসন্ন রায়ের নামে মোট ৯১টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে। প্রতিটি সংস্থার অধীনে বেশ কিছুটা করে জমি কেনা হয়েছে।
এই নিয়েই প্রসন্নর দাবি, স্থানীয় চাষিদের জমিতে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। কাজের বিনিময়ে তাদের মজুরি দিতেন। চাষবাস করে রোজগার করা টাকাই নিজের বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন তিনি। ইডির দাবি, তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে প্রসন্নের কোনও জমিতেই চাষবাস হয়নি। সংস্থার একাধিক কর্মচারীদের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই নিজের বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
আরও পড়ুন: ২ সপ্তাহে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৭ টা FIR, এবার পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা হাইকোর্টে
আরবান সিলিং আইনের উল্লেখ করে ইডির দাবি, কোনও সংস্থা নিজের অধীনে সর্বোচ্চ সাত কাঠা জমি রাখতে পারে। তদন্তে উঠে এসেছে প্রসন্নর নামে থাকা ৯১টি সংস্থার অধীনেই সাত কাঠা করে জমি রয়েছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল বলে আশঙ্কা ইডির।
প্রসন্ন, তার স্ত্রী কাজল সুনি রায় এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের মোট ২৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কথা আদালতে জানিয়েছে ইডি। আগেই সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ফরেন্সিক অডিট করিয়েছিল আরেক তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে মোট ৭২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হন প্রসন্ন রায়। জানা যায়, সম্পর্কে তিনি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নি-জামাই। তার অফিসে তল্লাশি করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে৷ রংমিস্ত্রি থেকে দুবাইয়ের হোটেল মালিক। প্রসন্নর উল্কাগতির উত্থানেই কার্যত চোখ কপালে ওঠে গোয়েন্দাদের।
আগেই আদালতে ইডি দাবি করেছেন, চাকরি বিক্রির পাশাপাশি বিপুল সম্পত্তিও কেনাবেচা করেছেন প্রসন্ন। কম দামে সম্পত্তি কিনে বেশি দামে বিক্রির কাজের সাথেও প্রসন্ন যুক্ত ছিল বলে জানা যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নয়, আরও একাধিক নেতার সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিল ঘনিষ্ঠ। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গেও তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। ইডির দাবি, এসপি সিনহা, তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা সহ শিক্ষা দফতরের বহু আধিকারিকেরও তিনি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে প্রসন্ন।