বাংলা হান্ট ডেস্ক : ২০১৯ এ তীরে এসে তরী ডোবে। হাজার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দেওয়া চন্দ্রযান ২ (Chandrayaan 2) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ল্যান্ডারকে আছড়ে ফেলতে হয় চাঁদের মাটিতে। আজও ভারতবাসীর মনে দগদগে সেই ক্ষত। কিন্তু থেমে থাকে নি ইসরো। ইসরোর (Indian Space Research Organisation) চেয়ারম্যান কে সিভানের জলে ভেজা চোখ শুরু করে স্বপ্ন দেখতে। ২০২৩ সালে সেই স্বপ্নই সফল হওয়ার মুখে। সব ঠিকঠাক চললে আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইতিহাস লিখবে ভারত। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে ল্যান্ডার বিক্রম (Lander Vikram)।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ইসরোর প্রতিনিয়ত সমালোচনা করে চলা পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বর্তমানে কী অবাস্থা। পড়শি দেশের জাতীয় পতাকাতেই রয়েছে চাঁদ। কিন্তু চাঁদে গিয়ে সেই পতাকার চিহ্ন রেখে আসার কোনও প্রয়াস তারা করেছে বলে জানা যাচ্ছে না। দেখে নেওয়াক পাকিস্তানের মহাকাশ সংস্থা কী করছে আজকাল!
সুপারকো তৈরি হয় ইসরোর ১০ বছর আগেই : পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নাম স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো)। ইসরো তৈরি হওয়ার প্রায় ১০ বছর আগে ১৯৬১ সালে তৈরি হয় এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এমনকী চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার থেকেও পুরনো এই সংস্থা। কিন্তু তৈরি হওয়ায় সার, পরের ৫০ বছরে এই সংস্থা কিছুই করে উঠতে পারেনি। ২০১১ সালে প্রথম স্যাটেলাইট পাঠায় পাকিস্তান। তাও আবার নিজের প্রযুক্তিতে নয়। চিনের লঞ্চপ্যাড থেকে এই স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাতে হয়েছিল পাকিস্তানকে।
ইসরো বনাম সুপারকো : সুপারকোর প্রায় ১০ বছর পরে তৈরি হলেও ইতিমধ্যেই মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য নাম ইসরো। ইতিমধ্যেই ভারতের লঞ্চপ্যাড থেকে মহাকাশের স্যাটেলাইট পাঠানোতে রেকর্ড গড়েছে ইসরো। ২০১৭ সালে একটি মাত্র রকেট বাহুবলীর সাহায্যে একবারে ১০৪টি স্যাটেলাইট লঞ্চ করেছিল ইসরো। বর্তমানে বিশ্বের একাধিক দেশ নিজেদের তৈরি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানর ক্ষেত্রে ইসরোর লঞ্চপ্যাড ব্যবহার করে।
টাকা দেয়না পাক সরকার : গত ৫৮ বছর ধরে এই সংস্থা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও সাফল্যই পায়নি সুপারকো। তার অন্যতম কারণ ‘ফান্ডিং’। গত কয়েক দশকে একদিকে যখন ইসরোকে গবেষণা চালানোর জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে, অন্যদিকে সুপারকোর উন্নতির জন্য টাকা দেয়নি পাক সরকার। এমনকী ৮০-৯০ এর দশকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হক সুপারকোর জন্য বরাদ্দ সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
সুপারকোর মাথায় বসে রয়েছেন সেনাপ্রধানরা : পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে আর একটি প্রতিবন্ধকতার কারণ হলো সংখ্যালঘুদের সযোগ না দেওয়া। অনেক দক্ষ বিজ্ঞানী শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য সুযোগ পাননি সেখানে। পরবর্তীকালে তাঁরা অন্য দেশে মহাকাশ গবেষণায় কাজ করেছেন। এ ছাড়াও সবকিছু দেখভালের জন্য বিজ্ঞানীদের মাথার উপর সেনা প্রধানদের বসিয়ে দিয়েছে পাক সরকার। এর ফলে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা পেয়েছে সুপারকো।
অভাব উৎসাহের : পাকিস্তানে অল্পবয়স থেকে ছেলেমেয়েদের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ার অভাব রয়েছে। গোটা দেশের হাতে গোণা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ গবেষণার বিষয়ে পড়ানো হয়। ফলে ছোটবেলা থেকে তাদের মধ্যে সেই আগ্রহ তৈরি হয় না।
আরও পড়ুন : আরাবল্লীতে লুকিয়ে ছিল নুহ হিংসায় অভিযুক্ত আমির! এনকাউন্টার করল পুলিস, তারপর …
‘জিনিয়াস’ পাকিস্তানের বিজ্ঞানমন্ত্রী : তার মধ্যে বর্তমান পাক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী তাঁদের দেশের গবেষণা সংস্থাকে হাসির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি জানেনই না এখনও অবধি তাঁরা কী সাফল্য পেয়েছেন। তিনি তো এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারের সময় এও বলে দিয়েছিলেন, মহাকাশে পাঠানো এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম টেলিস্কোপ ‘হাবল টেলিস্কোপ’ নাকি সুপারকো পাঠিয়েছে। কিন্তু আদতে সেটি পাঠিয়েছে নাসা। তিনি আরও দাবি করেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে পাকিস্তান।
ফান্ডিং নেই, মানছেন সকলে : তবে সুপারকোর এই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, মহাকাশ গবেষণা এমন একটা বিষয়, সেখানে কোনও অভিযানের আগে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়। অভিযান সফল হলে অবশ্যই তার লাভ হয়। কিন্তু এটা বরাবরই ঝুঁকির ব্যাপার। আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ব্রিটেন ও বর্তমানে ভারতও এই মহাকাশ গবেষণায় যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে তার সিকিভাগও করে না পাকিস্তান। আর তাই পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণার এই অবস্থা। পাকিস্তানের উচিত ভারতকে কটাক্ষ না করে নিজেদের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা করা।