বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিশ্ব বাজারে ক্রমাগত পড়েই চলেছে টাকার দাম। চলতি বছরে ডলারের তুলনায় ৭৫-এর গণ্ডি ছাড়িয়েছিল টাকা। এবার ক্রমশ ৮০-র গণ্ডিও ছাড়িয়ে গেল। সোমবার আগের তুলনায় আরও তলিয়ে গিয়ে রেকর্ড পতন হল ভারতীয় মুদ্রার।
আগের চেয়ে ৫৮ পয়সা বেড়ে এই প্রথম ডলার পৌঁছল ৮১.৬৭ টাকায়। অর্থাৎ এবার থেকে ১ ডলার পেতে গেলে ভারতীয়দের খরচ করতে হবে ৮১.৬৭ টাকা। আমেরিকা ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়ে দেওয়ার পরেই বৃহস্পতি ও শুক্রবার টাকার দাম ৮০ এবং ৮১ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এমনভাবে চলতে থাকলে ১ ডলারের হিসেবে ভারতীয় মুদ্রা ৮২ টাকা হয়ে যাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
টাকার দামের পতনের ফলে মূল্যবৃদ্ধি আরও কীভাবে বেড়ে যাবে ও সাধারণ মানুষের বিপদ হবে তা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সোমবার একটি টুইটে ভিডিও পোস্ট করে ব্যাখ্যা করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাটে। এমনকি নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দফায় শপথ নেওয়ার দিনে ৫৮.৬২ টাকার ডলারের দামের সঙ্গে তুলনা টানেন।
তৎকালীন বিরোধী নেতা এবং গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের সমালোচনা করেছিলেন। এদিন কংগ্রেসের মুখপাত্র তারও কটাক্ষ করেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, দেশবাসীর আর্থিক দুর্বলতাকেই তুলে ধরছে এই টাকার দর। কিন্তু তাও প্রধানমন্ত্রী এদিকে নজর দিচ্ছেন না।
টাকার দরের পতনের ফলে কী কী অসুবিধায় পড়বে ভারত? বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও, টাকা তলানিতে নেমে যাওয়ায় তার সুবিধা নিতে পারবে না ভারত। তেল-সহ সমস্ত পণ্যের আমদানি খরচ বাড়বে অনেকটাই। ফলে আরও বাড়তে পারে মূল্যবৃদ্ধি। রফতানির থেকে আমদানি মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় বেড়ে যাবে বাণিজ্য ঘাটতি। টাকাকে বাঁচাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে বাজারে ডলার ছাড়তে হচ্ছে। ফলে কমছে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার।
মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় বর্ধিত সুদে ঋণের চাহিদা ধাক্কা খাবে তার খরচ বাড়ায়। সংস্থার লগ্নির আগ্রহ কমবে। লগ্নি না বাড়লে তৈরি হবে না কাজ। ফলে বাড়বে না চাহিদা। বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি তুলে নিলে পড়বে সূচক। ধাক্কা খাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে ভারতের আমদানির খরচ বাড়বে। ফলে ওষুধ, ভোজ্যতেল, গাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশের মতো একাধিক পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে তৈরি জিনিসও আরও দামি হবে। এর ফলে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ রোজগার করা মানুষ। এর ফলে বাজারে চাহিদা কমতে পারে। যার ফলে ধাক্কা খাবে ভারতের অর্থনীতি।
মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলেন, “বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল সস্তা হয়ে গেলেও ভারতে পেট্রল-ডিজেলের দাম হয়তো কমানো হবে না। টাকার দরের পতনের ফলেই এমনটা হবে। সব মিলিয়ে বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়তে পারে অনেকটাই।”
পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের মতে, টাকার দাম পড়ে যাওয়ায় বিদেশে পড়ার ও ভ্রমণের খরচ বাড়ছে অনেকটাই। এই ক্ষেত্রেও চাহিদা কমবে, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক। আমদানির খরচ বাড়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পীরাও বিপদে পড়বেন বলে মত একাংশের।