জোর বিপাকে পার্থ-মানিক? নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে CBI যা দাবি করল… তোলপাড় রাজ্য!

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতি মামলা (Primary Recruitment Scam) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। ইতিমধ্যেই এই মামলায় নাম জড়িয়েছে একাধিক হেভিওয়েটের। গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) সহ আরও অনেকে। এবার এই মামলাতেই বিস্ফোরক দাবি করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, এক নম্বর নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Primary Recruitment Scam) নয়া মোড়!

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের হাতে যে সকল তথ্য উঠে এসেছে, তা চার্জশিট রূপে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেই দাবি করা হয়েছে, এক নম্বর নিয়ে ষড়যন্ত্র করার কথা। কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানিয়েছে, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা অনুযায়ী ২০১৭ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বাংলা মাধ্যমের প্রশ্নপত্রে একটি প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, ওই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যে বিকল্পগুলি প্রদান করা হয়েছিল, তার মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয়, উভয় বিকল্পই ঠিক। সেক্ষেত্রে যে কোনও একটি উত্তর দিলেই নম্বর পাওয়ার কথা। তবে অভিযোগ, শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিকল্পের ক্ষেত্রেই এক নম্বর দেওয়া হয় ।

এমতাবস্থায় পর্ষদের তরফ থেকে প্রথম বিকল্পের ক্ষেত্রেও নম্বর প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে চারটি শর্ত নির্ধারিত হয়েছিল। পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয়, প্রথমত, যে সকল চাকরিপ্রার্থী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দ্বিতীয়, যে সকল চাকরিপ্রার্থী শুধুমাত্র এক নম্বরের জন্য উত্তীর্ণ হননি, তৃতীয়ত, যে সকল প্রার্থী বাংলা মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন এবং চতুর্থত, যারা সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর হিসেবে প্রথম বিকল্পটি নির্বাচন করেছিলেন তাঁদেরকেই অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ ‘মাতব্বরি’, ‘অমানবিক আচরণ…’! সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসিত ED! কোন মামলায়?

এদিকে সিবিআইয়ের (CBI) দাবি, পর্ষদের তরফ থেকে যে শর্তগুলি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেই হিসেবে ৪২৮ জন চাকরিপ্রার্থীর অতিরিক্ত এক নম্বর পাওয়ার কথা। তবে পর্ষদের তরফ থেকে মাত্র ২৭০ জনের প্যানেল প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ২৬৪ জন শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, এভাবে ১৫৮ জন প্রার্থীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, যোগ্যতা নয়, বরং বাছাই করে ২৭০ জনের তালিকা তৈরি করেছিল পর্ষদ। এর মধ্যে কেউ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন, কেউ উর্দু মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন, কেউ আবার অতিরিক্ত এক নম্বর পাওয়ার পরেও উত্তীর্ণ হননি। একজন চাকরিপ্রার্থী আবার দ্বিতীয় বিকল্প সঠিক উত্তর হিসেবে বেছে নেওয়ার পরেও অতিরিক্ত এক নম্বর পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

CBI Primary recruitment scam

জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিকের নেতৃত্বে আধিকারিকরা একটি বৈঠক করেছিলেন। সেখানেই বিতর্কিত প্রশ্নে অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়া সম্বন্ধিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার (Primary Recruitment Scam) চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, এই বিষয়ে মানিকের দফতর থেকে শিক্ষা দফতরের কাছে নথিপত্র পাঠানো হয়েছিল। সেই সঙ্গেই বিশেষজ্ঞের অভিমতও চাওয়া হয়। ওই নভেম্বর মাসেই মানিকের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেন রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ।

কিছুদিন পরেই পর্ষদের তরফ থেকে ২৭০ জন প্রার্থীর প্যানেল প্রকাশ করা হয়। তবে সেখানে চাকরিপ্রার্থীদের নাম, বাবার নাম, ক্রমিক সংখ্যা জাতীয় কোনও তথ্য ছিল না। সিবিআইয়ের দাবি, কারচুপি (Primary Recruitment Scam) এড়ানোর জন্য জেনেবুঝে এই সকল তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অন্যদিকে পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয়, তাদের কাছে এই প্রার্থীদের কোনও তথ্য নেই। এরপর ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে ওই ২৭০ জন প্রার্থীর নিয়োগপত্রের জন্য রাজ্যের নানান জেলায় সুপারিশপত্র পাঠিয়ে দেন পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি রত্না চক্রবর্তী বাগচি। পরবর্তীতে এই ২৭০ জনের মধ্যে ২৬৪ জন চাকরি পান। সিবিআইয়ের দাবি, বিতর্কিত প্রশ্নে বাড়তি নম্বর দেওয়া নিয়ে পার্থ-মানিকের ষড়যন্ত্রের ফলেই তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। ওই ২৬৪ জনের নিয়োগ অবৈধভাবে হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর