ভাগাড়ের পাশেই স্কুল, নাক চেপে মিড ডে মিল খায় পড়ুয়ারা! নারকীয় অবস্থায় শিক্ষালাভ হুগলির স্কুলে

বাংলাহান্ট ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) শিক্ষাব্যবস্থা  (Education System) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিকবার। শুধু পড়াশোনার দিক দিয়েই নয়, পরিকাঠামোগত দিক দিয়েও একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে এ রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলি। কোথাও ক্লাসরুম ঠিক নেই তো কোথাও শৌচালয়। 

এমনকি, মিড-ডে মিল পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকবার। বিশেষত প্রশ্ন উঠেছে মিড-ডে মিলের মান নিয়ে। তবে এবার এক নজিরবিহীন অভিযোগ উঠল চুঁচুড়ার এক প্রাথমিক স্কুলের বিরুদ্ধে। এই স্কুলে পৌঁছতে পড়ুয়াদের পেরোতে হচ্ছে একটি আবর্জনার ভাগাড়। বা বলা চলে, কার্যত ভাগাড়ের গায়েই স্কুল। 

ভাগাড়ের পচা দুর্গন্ধে যেখানে টেকা দায়, সেখানে বসেই শিক্ষালাভ করছে কচিকাঁচারা। সেখানেই তাদের দেওয়া হচ্ছে মিড-ডে মিলের খাবার। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে চলছে হুগলির চুঁচুড়ার ব্যান্ডেল বিদ্যামন্দির নিম্ন বুনিয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ভাগাড়ের পাশে স্কুল হওয়ায় দিনের পর দিন এমন দুর্বিষহ পরিবেশে চলছে পড়াশোনা। বৃষ্টি হলে ভাগাড়ের নোংরা জল নেমে আসে রাস্তায়। সঙ্গে আবর্জনা থেকে আরও তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। সেই সব সহ্য করে প্রতিনিয়ত পড়ুয়াদের পড়িয়ে চলেছেন এই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

যেহেতু এখানেই ছাত্র-ছাত্রীদের মিড-ডে মিল দেওয়া হয়, তাই এখানে লাইন দিয়ে পাত পেড়ে খায় শিশুরা। ফলে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাচ্চারা। এই কারণে অনেক পড়ুয়াই আর স্কুল মুখো হতে চাইছে না। কেউ কেউ আবার স্কুলে গেলেও সেখানে বসে খেতে চাইছে না। শুধু তাই নয়, এই স্কুল ছাড়িয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করার কথা ভাবছেন কোনও কোনও অভিভাবক।

তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে স্কুল। প্রশাসনের কাছে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা সীমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সেখানে প্রায় সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। স্কুলে মোট শিক্ষক-শিক্ষিকা ১২ জন। 

তিনি বলেন, “এখানে শ্রেণিকক্ষের অভাব রয়েছে। স্কুলের সামনের জলা জমি ভরা থাকে আগাছায়। সঙ্গে সাপখোপের ভয় তো রয়েছেই।” স্কুলের আশেপাশে কোনও পাঁচিল না থাকায় একাধিকবার চুরিও হয়েছে। সেজন্য সিসি ক্যামেরা বসেছে স্কুলে।

প্রধানশিক্ষিকা আরও জানান, প্রশাসনকে সামনের জায়গাটি ভরাট করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে বাচ্চারা সেখানে খেলতে পারে আর এই পরিবেশের সমস্যার সমাধান হয়। তবে তাতে কোনও কাজ হয়নি।

পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের তরফে আবর্জনা ফেলে নিচু জমি ভরাট করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তিন মাসেই এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তা হয়নি। এই বিষয়ে এলাকার বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, “এই স্কুল রেলের জমিতে। খুবই নিচু জায়গায় অবস্থিত হওয়ার ফলে এক সময় জলে ডুবে থাকত। সরকারি খরচে এখানে নতুন স্কুলঘর তৈরি হয়েছে। তবে বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলোর জায়গা নেই।” 

ভাগাড়ের পাশে পড়াশোনা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্কুল চলার ব্যাপারে তিনি জানতেন না। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে হুগলির জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া জানান, তিনি স্কুলের সামনে আবর্জনা পড়ে থাকার খবর পেয়েছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনিও।  

Subhraroop

সম্পর্কিত খবর