বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সরকারি প্রকল্পে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনে লাগাতার সুর ছড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। অথচ এহেন পশ্চিমবঙ্গেই এবার বঞ্চনার শিকার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির জন্য ‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট’ (Government Allowance) দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই।
সরকারি বরাদ্দের টাকা (Government Allowance) পাচ্ছেন না প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা
অথচ রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলের (Primary School) জন্য এই ধরনের কোনও ঘোষণা করা হয়নি। যার ফলে বিরাট সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছেন রাজ্যের একাধিক জেলার প্রাথমিক স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিশেষ করে সেসমস্ত স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা বেশি, সেখানেই এই সমস্যা বাড়ছে বলেই দাবি করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ।
সাধারণত রাজ্যের দেওয়া কম্পোজ়িট গ্রান্টের (Government Allowance) টাকাতেই স্কুল পরিচালনার সমস্ত কাজ চলে। কিন্তু শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, গত এক বছর ধরে নাকি ওই খাতে কোনও টাকাই মেলেনি। তাই চক-ডাস্টার কেনা থেকে সাফাইয়ের খরচ, কিংবা ইলেকট্রিক বিলসহ পরীক্ষার খরচ সবই ধার করে চালাতে হচ্ছে।
কোথাও কোথাও আবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে শিক্ষকরাই নিজেদের টাকায় সেই বিল মেটাচ্ছেন। তও নেহাত কম টাকা নয়। এই যেমন পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের গগনাবাইদ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থ পাল জানিয়েছেন তাঁদের, স্কুলে বিদ্যুতের বিল আসে দেড় হাজারের বেশি। এসবের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর খরচও বহন করতে হচ্ছে তাঁদের।
পুরুলিয়ার ওই প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ুয়াদের কাছ থেকে তাও ফি হিসাবে কিছু টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের সেই উপায়-ও নেই। প্রাথমিক শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক। তাই স্কুল চালাতে গিয়ে কার্যত নাজেহাল অবস্থা তাঁদের। বছর শেষের মুখে অথচ এখনও বেহাল অবস্থা রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলির।
অধিকাংশ জেলার শিক্ষকদের একটা বড় অংশেরই অভিযোগ, একটি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চলল। এখনও স্কুলের মেরামতের কাজ বাকি। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে আর বেশীদিন স্কুলগুলি চলবে না। স্কুলগুলির দাবি, ছাত্র-সংখ্যার অনুপাতে ওই খাতে অর্থ বরাদ্দ (Government Allowance) হয়। তাই যে সব স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশি, সেখানেই সমস্যা বেশি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শীত পড়তে না পড়তেই শেষ! পৌষেই চড়ল তাপমাত্রা, সপ্তাহান্তে কেমন থাকবে আবহাওয়া?
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি রাজ্যের এই বঞ্চনার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সুর চড়িয়েছে রাজ্যের বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষা খাতের টাকা (Government Allowance) অন্য জায়গায় খরচ করায় কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা দিতে পারছে না রাজ্য। এপ্রসঙ্গে সিপিএমের দুই শিক্ষক সংগঠন, এবিটিএ ও এবিপিটিএ-র নেতা যথাক্রমে ব্যোমকেশ দাস, নিলয় মুখোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘কেন্দ্র ষাট শতাংশ টাকা দেয়নি বলে নাকি রাজ্য টাকা দিতে পারছে না। নিজেদের বরাদ্দের চল্লিশ শতাংশ টাকা দিয়ে তারপর এই দাবি করা উচিত রাজ্যের।’
একইসাথে অভিযোগ, উঠছে শিক্ষক নিয়োগ না করেই স্কুলে শিক্ষক-সঙ্কট তৈরি করার পাশাপাশি স্কুল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না করে আসলে শিক্ষার বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা করছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েই তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের পুরুলিয়ার সভাপতি জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট নিয়ে অন্য শিক্ষক সংগঠনের দাবি যথাযথ নয়। শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়ে সচেতন। মন্ত্রী থেকে শিক্ষা দফতর, সব জায়গায় কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা দেওয়ার আবেদন জানানোর পর টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।’ যদিও টাকা হাতে না আসা পর্যন্ত তা মানতে নারাজ শিক্ষকরা।