সরকারের জমিতে সরকারি ভবন, আর সেই ভবনই এখন তৃণমূল নেতার স্কুল! জানে না শিক্ষা দফতর

বাংলাহান্ট ডেস্ক : পুকুর চুরির প্রবাদ বাংলায় প্রায়ই শোনা যায়,কিন্তু দিনে দুপুরে ‘হাট চুরির ‘ ঘটনা শুনেছেন? হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন! সরকারের নেওয়া লিজ জমিতে সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল হাট। সেই হাটের ব্যাপারে ক্রেতা – বিক্রেতা বিশেষ কারোরই কোনো উৎসাহ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকাই পড়েছিল সেই হাটের ভবনটি। তবে আচমকাই মুর্শিদাবাদের ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের বক্সিপুর গ্রামের সেই হাটের ভবনটি পরিণত হলো ‘স্কুল’ ভবনে। যদিও এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র কিছুই জানে না জেলা শিক্ষা দপ্তর।

কিন্তু হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা এই স্কুলটির মালিক কে? ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আরফতান বিবির স্বামী বাবলু মন্ডল জানালেন তিনিই মালিক। কিন্তু হাটের বদলে স্কুল তৈরি হলো কি করে? বাবলু মন্ডল দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে হাট তৈরি হয়ে পড়ে আছে। অনেক আশা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল হাটটি। কিন্তু দীর্ঘদিন কেটে গেলেও কোন ক্রেতা-বিক্রেতা এই হাট সম্পর্কে আগ্রহ দেখাননি। এর ফলে সেই ফাঁকা জায়গায় তারা স্কুল তৈরি করেছেন।

এই স্কুলে ভর্তির ফি বাবদ নেওয়া হয় ৩০০ টাকা। কিন্তু সেই বিলে কোনও জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম উল্লেখ নেই। এই বিষয়ে অবশ্য বাবলু জানান, ওই পয়সায় আপাতত আসবাবপত্র কেনা হয়েছে। স্কুল চালিয়ে যদি লাভ হয় তখন দেখা যাবে। এদিকে, পঞ্চায়েত প্রধান আরফতান বলেন, স্কুল তৈরি করেছেন তার স্বামী। তাই এ বিষয়ে যা বলার তার স্বামী বলবেন। অন্যদিকে ডোমকলের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এরকম ঘটনা যে ঘটতে পারে তা তিনি ভাবতেও পারেন না। এ বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সদ্য পথ চলতে শুরু করা এই স্কুলটিতে প্রথম বর্ষে প্রায় ৩০০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। এই স্কুলে এখনো পর্যন্ত কোন প্রধান শিক্ষক নেই। রুবেল মন্ডল নামে এই স্কুলের এক শিক্ষকের দাবি, অনেক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল। তার মধ্যে অনেকে আবার ছেড়ে চলে গিয়েছে। গরমের ছুটিতে স্কুল এখন বন্ধ। কিন্তু শিক্ষা দপ্তর স্কুলের ব্যাপারে কিছুই জানেনা। এলাকার স্থানীয় এক সিপিএম নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, শিক্ষা এখন লাভজনক ব্যবসা জেনেই এই ধরনের ফন্দি এঁটেছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান ও তার স্বামী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ধুমধাম করে উদ্বোধন হয় এই হাটটির। ব্লক প্রশাসনের সূত্রে খবর, প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় লিজ জমির উপর হাটের ভবন। কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় সরকার ভেবেছিল এই হাটটি সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাহায্য করবে। কিন্তু মূল বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় এই হাটটির ব্যাপারে বিশেষ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।


Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর