বাংলাহান্ট ডেস্ক : গাছ কাটাকে ঘিরে তোলপাড় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা। গাছ কাটতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করছে তৃণমূল নেতা এই অভিযোগের পাশাপাশিই সামনে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। ঘটনার সূত্রপাত আমফান ঝড়ের সময় বলেই খবর।
জানা যাচ্ছে, আমফান ঝড়ের সময় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সর্দার এবং কৃষ্ণপদ সর্দারের বেশ কয়েকটি গাছ গিয়ে পড়ে প্রতিবেশী দিলীপ সর্দারের বাড়ির দিকে। এর মধ্যে একটি ক্ষিরিশ গাছ সরাসরি গিয়ে পড়ে ওই প্রতিবেশীর পাঁচিলে। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাঁচিল সহ বাড়ির একাংশ। তার তাই নিয়েই শুরু ঝামেলার।
প্রতিবেশী দিলীপ সর্দারের অভিযোগ, বিগত ২ বছর ধরে পুরসভা এবং বিশ্বজিৎ সর্দারকে বহুবার বিষয়টি জানালেও ফল মেলেনি কিছুই। তিনি সমস্ত দায় গাছের মালিক বিশ্বজিৎ সর্দারের ঘাড়ে চাপালেও বিশ্বজিৎ অবশ্য অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন পুরসভা এবং এক তৃণমূল কর্মীর দিকেই। বিশ্বজিতের পালটা অভিযোগ, তিনি নিজের উদ্যোগে গাছ কাটতে গেলেও বাপ্পা নস্কর নামে এক তৃণমূল কর্মী এসে মাঝপথে থামিয়ে দেয় সেই কাজ। জানানো হয় ৫০ হাজার টাকা না দিলে কাটতে দেওয়া হবে না গাছটি। আর তা থেকেই শুরু বচসার।
বিশ্বজিৎ সর্দার বলেন, ‘তৃণমূল কর্মী আমি। গত প্রায় ৪ বছর ধরেই যুব সভাপতি পদে রয়েছি। কিন্তু আমফান ঝড়ে আমার বাড়ির গাছ ভেঙে যাওয়ার পর পুরসভাকে বারবার বলে লাভ হয়নি কিছুই। শেষমেষ কাঠুরে ডেকে আমরাই গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু গাছটি যখন প্রায় কাটা শেষ হয়ে গেছে তখন সেকানে বাপ্পা নস্কর এসে ঝামেলা বাঁধায়। ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয় গাছ কাটার জন্য। বাপ্পা বলে ওই টাকা না দিলে গাছ কাটতে দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর উত্তরে আমি পালটা বলি গাছ আমাদের নিজেদের, সরকারি গাছ তো নয়। তাহলে আমরা কাটতে পারব না কেন? আর তারপরই এই নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা।’
শুধু তাই নয়, এই টাকা চাওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘কাউন্সিলর জিতেছে। পিকনিক করব আমরা। ৫০ হাজার টাকা দিন। নাহলে গাছ কাটতে পারবেন না।’ যদিও এই অডিও ক্লিপটির সত্যতা এবং অডিও ক্লিপে শুনতে পাওয়া গলাটি বাপ্পা নস্করের কি না তা যাচাই করেনি বাংলাহান্ট।
ঝামেলার খবর পেয়ে বুধবার ঘটনাস্থলে আসেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর সোমা বেরা। পুরসভা এবং বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। উলটে গাছের মালিক বিশ্বজিৎ সর্দারকেই অসামাজিক কাজকর্মে যুক্ত বলে দেগে দেন কাউন্সিলর। এমনকি তিনি এও জানান যে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই বিশ্বজিতের।
কাউন্সিলর সোমা বেরা বলেন, ‘এখানে একটি গাছ কাটার নাম করে বহু পুরোনো ৭-৮ টি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছিল সম্পুর্ণ বেআইনি ভাবে। আমি পুরো ঘটনাটি জানানোর পর চেয়ারম্যান দুলাল দাসের তৎপরতায় পুরসভার ৩ সদস্যের একটি দল গিয়ে বন্ধ করে কাজটি৷ এরপর গাছের মালিকদের পুরসভায় এসে কথা বলার জন্য ডাকা হয়।’ বিশ্বজিৎ সর্দার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্বজিৎ সর্দার কখনওই তৃণমূল করেন না। দলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। বরং এলাকায় একাধিক অসামাজিক কাজকর্মে তিনি যুক্ত।’
স্বভাবতই গাছ কাটতে গিয়ে ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’ বেরিয়ে পড়ল মহেশতলায়। গাছ কাটার এই ঘটনাকে ঘিরে সামনে এলো তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। দু তরফই অবশ্য অনড় নিজেদের দাবিতে। অভিযোগ প্রতি অভিযোগে সরগরম এলাকা। কে সত্যি কে মিথ্যে সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সময়ই দেবে।