বাংলাহান্ট ডেস্ক : বেসরকারি বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে জীবন শুরু করে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। এক একবার পঞ্চায়েত ভোট যাওয়ার পর আর কিছু বদলাক না বদলাক বদলেছে তৃণমূল নেতার সম্পত্তির ফিরিস্তি। যদিও সেই অভিযোগ মোটেই মানতে রাজি নন তিনি। পূর্ব বর্ধমানের এই তৃণমূল উপপ্রধানের দাবি দুর্নীতি নয়, সবই হয়েছে নিজের দমে।
পূর্ব বর্ধমানের শাঁখারি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান তথা শাঁখারি ২ অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন চৌধুরী ওরফে নাসপাতি। একই সঙ্গে খণ্ডঘোষ ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতিও তিনি। বাবা ছিলেন প্রান্তিক চাষি। নিজে কাজ করতেন বেসরকারি বাসের কর্মী হিসেবে। এককালে দাদা বেদানার সঙ্গে পৈতৃক বাড়িতেই থাকতেন নাসপাতি। কিন্তু বর্তমানে এহেন নাসপাতির প্রাসাদোপম বাড়িতে যেন চোখ আটকায় সকলেরই।
২০০৮ সাল অবধি বেসরকারি বাসের কর্মী হিসেবে কাজ করার পরের পাঁচ বছর ডায়মন্ড হারবারে কম্বল ফেরি করতেন নাসপাতি। এরপর রাতারাতিই তাঁর ভাগ্য যেন খুলে যায় ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে জেতার পর থেকে। চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে নাসপাতি চৌধুরীর সম্পত্তির বহর। তৈরি হয় প্রাসাদ সদৃশ বাড়ি। প্রথম দফায় উপপ্রধান হওয়ার পরই ট্যাক্টর, গাড়ি, সাবমার্সিয়াল পাম্প এবং ১৫ বিঘা জমি কেনেন ওই তৃণমূল নেতা। তিন কাঠা জমিতে তৈরি হয় মুরগীর খামার। ২০১৮ সালে নিজের দল থেকে দাঁড়াতে না পারলেও পাশের সংসদে ভোটে জিতে আবার তৃণমূলেই ফেরেন। আবারও বসেন উপপ্রধানের গদিতে। তৈরি হয় ১৪০০ বর্গফুটের প্রাসাদ। শোনা যায় মার্বেলে মোড়া বাড়ি বানাতে খরচ হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা।
আর এই সম্পত্তি নিয়েই শুরু বিতর্ক। স্থানীয়দের দাবি, এলাকার সব কাজেই নাকি বখরা দিয়ে হয় নাসপাতিকে। ওই ব্লকের এক নেতার অভিযোগ, ‘বর্ধমানের নবাবহাটে বালি খাদানের ইজারাদারদের সঙ্গে নাসপাতি বৈঠক করছেন, এমন ছবিও ভাইরাল হয়েছিল। কেন ওই বৈঠক, তা কি কেউ বোঝেন না?’
যদিও সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন নাসপাতি। তাঁর দাবি নিজের দমেই সবকিছু করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সাফাই গেয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের পঞ্চায়েতে বছরে এক কোটি টাকার কাজ করার জায়গা নেই। এখানে বালিখাদান বা ইটভাটাও নেই। সেখান থেকে আবার প্রণামী! হাস্যকর কথা। প্রতি বিঘা জমিতে তৈরি বীজ বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা লাভ করি। ৬০ বিঘা বীজ বিক্রি করে কত টাকা আয় বুঝতে পারছেন? সেখান থেকেই সব কিছু করেছি। কে, কী বলল তাতে গুরুত্ব দেওয়া আমার কাজ নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি, সমাজসেবা করার জন্য। আর চাষ করি, আয় করার জন্য।’ একই সঙ্গে বাড়ি তৈরিতে বিপুল খরচের জল্পনাও উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা।