বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত প্রায় আট-ন বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ভোট কুশলী হিসেবে কাজ করে আসছেন পিকে অর্থাৎ প্রশান্ত কিশোর। শুরুর দিনগুলো কেটে ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেই। তারপর বিহারের নীতীশ কুমার, পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সবকটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক নেতাদের দুর্দান্ত জয়ের সঙ্গী হয়েছেন তিনি। তার অমোঘ স্ট্র্যাটেজির কল্যাণেই জয় আরও অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে এই সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের।
যদিও বর্তমানে প্রশান্ত কিশোরকে অনেকেই চেনেন তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট কুশলী হিসেবে। বিজেপির বাংলা জলের স্বপ্ন প্রায় ছারখার করে ফের একবার দুশোরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। তার পিছনে পিকের দলের ভূমিকা যে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। নির্বাচনের আগেই সংবাদমাধ্যমে পিকে জানিয়েছিলেন বিজেপি একশোর বেশি আসন পেরোলে ভোট কুশলীর কাজ ছেড়ে দেবেন তিনি। তার কথা মিলে গেছে অক্ষরে অক্ষরে। তার এই কুশলতা ব্যবহার করতে চেয়ে ফের একবার ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ তাকে সঙ্গি হবার আহ্বান জানিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু ভোট কুশলী হিসেবে বাংলার ভোটে বিপুল জয় পাওয়ার পরেও এই কাজ ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। তবে তার নাম যেনো পিছু ছাড়ছে না পাঞ্জাব রাজনীতির।
এবার প্রশান্ত কিশোরের নাম ভাঁড়িয়ে আসন্ন পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়ক পদপ্রার্থীদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক চক্রের বিরুদ্ধে। এই প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস করে পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে, নির্বাচনের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিধায়ক পদপ্রার্থীদের থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এই প্রতারণা চক্রের মূল দুই অভিযুক্তের নাম রাকেশভূষণ ভাসিন ও রজতকুমার রাজা । শিবসেনা অর্থাৎ সূর্যবংশী নামক একটি দলের সঙ্গে যুক্ত তারা। ঘটনার পর থেকেই ফেরার মূল পান্ডা গৌরব শর্মা। পুলিশ সূত্রে খবর, কংগ্রেসের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গিয়ে নিজেকে প্রশান্ত কিশোর বলে পরিচয় দিতেন এই গৌরব শর্মাই। নেতাদের কাছে তারা জানাতেন কংগ্রেসের মাধ্যমে তাদেরকে আগামী নির্বাচনের প্রার্থী খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে টাকাই। অর্থাৎ টাকা দিলেই মিলবে বিধায়ক পদ। এমনকি অন্য দলে থাকা বেশ কিছু নেতাও এই প্রতারণা চক্রের জালে ফেঁসেছেন বলে অভিযোগ। আগামী নির্বাচনে টিকিট দেওয়ার নাম করে নেতাদের কাছে মোট ৫ কোটি টাকা হাতায় এই চক্রটি।
পুলিশের হাতে ধরা পড়া দুই অভিযুক্ত রাকেশভূষণ ভাসিন ও রজতকুমার রাজা ছিলেন শিবসেনা সংগঠনের জাতীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও একাধিকবার রাকেশকে একাধিকবার খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতারণা করতে তার কোন অসুবিধা হয়নি। রাজনীতির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে প্রশান্ত কিশোর শুধু পরিচিত নয় জনপ্রিয় নামও বটে। সংবাদমাধ্যমের পর্দায় প্রায় দিনই দেখা যায় তাকে, সেক্ষেত্রে তার নাম ভাঁড়িয়ে অন্য কেউ কিভাবে এত বড় চক্র চালাতে পারেন সে নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তবে নির্বাচনের দিনগুলিতে প্রশান্ত কিশোরকে নিজেদের পাশে পেতে যে কতখানি উদগ্রীব রাজনৈতিক নেতারা। তা আরেকবার প্রমান করে দিল এই ঘটনাই। যদিও বাংলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ তাকে তার কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য ডেকেছেন। সরকারি সমস্ত সুবিধা যাতে জনগণের কাছে পৌঁছায়, সেই বিষয়ে ক্যাপ্টেনকে নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন তিনি তবে ভোট কুশলী হিসেবে কাজ করার কোন প্রশ্নই উঠছে না। কারণ পলিটিক্যাল এড হিসেবে এই বিপুল জয়ের পরেও আর কাজ করতে চান না তিনি। বরং রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশের কথাই এখন মাথায় রয়েছে তার। সেই দিক থেকে এই ঘটনা আগামী দিনে কি প্রভাব ফেলে সেদিকেই এখন নজর থাকবে সকলের।