বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়ার (Russia) প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) শুক্রবার তাঁর ৭০ তম জন্মদিন পালন করছেন। যদিও, “বার্থডে বয়” পুতিন এখন তাঁর জীবনের সেই পর্যায়ে রয়েছেন যেখানে তাঁকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের জনগণের কাছে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনিতেই বর্তমান রাশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতির হার রেকর্ড ভেঙেছে। পাশাপাশি, ইউক্রেনের সাথে চলা যুদ্ধও কোনো সঠিক অবস্থানে পৌঁছচ্ছে না। এমনকি, সেনাবাহিনীতে যোগদান এড়াতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন তরুণরা। এমতাবস্থায়, ২২৫ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও যুদ্ধের ফলাফল সামনে না আসায় পুতিনের জনপ্রিয়তার উপর প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এখন পুতিন আমেরিকা ও ইউরোপের “টার্গেট” হয়ে গিয়েছেন। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ব শান্তি ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, পুতিন বিশ্ব পঞ্চায়েতে ইউক্রেনে হামলার ক্ষেত্রে সদুত্তর দিতে পারছেন না। এমতাবস্থায়, তাঁর সৈন্যদের হত্যা করা হচ্ছে এবং সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করছে। পাশাপাশি, অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টে, রাশিয়ার অর্থনীতি সঙ্কুচিত হচ্ছে। আগস্টের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে রাশিয়ার অর্থনীতিতে প্রায় ৪ শতাংশ পতন হয়েছে। যার ফলে দুই দশকেরও বেশি রাজনৈতিক জীবনে পুতিন তাঁর সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন।
মূলত, ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবরে জন্মগ্রহণ করা পুতিন যখন চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাঁর সেনাবাহিনী পাঠান তখন সমালোচকরা বলেছিলেন যে তিনি যেভাবেই হোক USSR-কে আবার বিশ্ব মানচিত্রে দেখতে চেয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, USSR ১৯৯১ সালে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তারপর অনেক রাশিয়ান জাতীয়তাবাদী এবং ডানপন্থী নেতা পুতিনের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছিলেন। সর্বোপরি, পুতিন এর আগে চেচনিয়া, জর্জিয়া এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে যুক্ত করেছিলেন। পাশাপাশি, ফেব্রুয়ারিতেই পুতিন ইউক্রেনের অংশ লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন যখন ইউক্রেন আক্রমণ করেছিলেন, তখন কেই ভাবেনি যে রাশিয়ার এই আক্রমন ইউক্রেন এত ভালোভাবে সামলে নেবে। পাশাপাশি, সকলেই ভেবেছিলেন যে, দুর্বল ইউক্রেন রাশিয়ার সামরিক শক্তির কাছে কয়েক দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু এখন সাত মাস পর এই যুদ্ধের ফলাফল দেখলে বোঝা যাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীকরণ যুদ্ধের ফলাফলকে একতরফা হতে বাধা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বাহিনী এখন প্রত্যাবর্তন করেছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলিকে পুনরুদ্ধারও করছে। সম্প্রতি, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছ থেকে ৬০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি, রুশ বাহিনী খারকিভ অঞ্চল থেকেও পিছু হটছে।
রাশিয়ার শহরে বিক্ষোভ, যুবকরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন: এমতাবস্থায়, ৩ লক্ষ নতুন সেনা নামানোর ঘোষণা করেছেন পুতিন। যার জন্য নতুন নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে এর বিরুদ্ধে রাশিয়ায় তুমুল প্রতিবাদ চলছে। এমনকি, নিয়োগের সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চলছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার শহরগুলিতে বিক্ষোভ চালানো হচ্ছে এবং সেনাবাহিনীতে যোগদান না করার লক্ষ্যে তরুণরা দেশ ছেড়ে পালিয়েও যাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ এড়াতে প্রায় ৩.৬০ লক্ষ যুবক জর্জিয়া ও কাজাখস্তানে চলে গেছেন। সেখান থেকে এই যুবকরা অন্য দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসলে এবারে ইউক্রেনে করা রাশিয়ার আক্রমনের বিষয়টি একেবারেই আলাদা। এটি জনসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। এমনকি, জনগণের সমর্থনও হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি, সংবাদপত্রে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
সঙ্কটে অর্থনীতি: ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পুতিন একটি গুরুতর অর্থনৈতিক ধাক্কা খেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের উচ্চ মূল্য রাশিয়া এবং পুতিনের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। পুতিন তুলনামূলকভাবে কম দামে ভারতে লক্ষ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক রেখেছিলেন। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রভাব অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে। এই প্রসঙ্গে গত আগস্টে, রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছিল যে, দেশের অর্থনীতি ৪.২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
মুদ্রাস্ফীতি ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে: তথ্য অনুসারে, এই বছরের এপ্রিলে যখন রাশিয়ান মুদ্রা রুবেলের দাম কমেছে, তখন মুদ্রাস্ফীতির হার ১৭.৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। যা বিগত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সেপ্টেম্বরে তা ১৪.০১ শতাংশে নেমে আসে। এমতাবস্থায়, ২০২৩ সালে এটি ৫ থেকে ৭ শতাংশে এবং ২০২৪ সালে এই হার ৪ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসাই পুতিনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে, মুদ্রাস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দামের বৃদ্ধির ফলে মানুষের অসন্তোষও বেড়েছে। এমতাবস্থায়, সামগ্রিকভাবে পুতিন তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে যে সবচেয়ে কঠিন সময়ে রয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি, তিনি এখন নিজের দেশের মানুষদের কাছেই একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।