বাংলাহান্ট ডেস্ক : ভয়াবহ অবস্থা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায়। বাংলা অক্ষর অবধি চিনতে পারছে না প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার করা সমীক্ষায় উঠে এসেছে এরকমই উদ্বেগজনক তথ্য।
করোনা পরিস্থিতির জেরে বিগত দুবছর ধরে বন্ধ ছিল রাজ্যের স্কুল-কলেজের দরজা। চলতি মাস থেকেই মহামারি আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে নিজের ছন্দে ফিরছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে পাড়ার শিক্ষালয় প্রকল্প। কিন্তু এরই মধ্যে সামনে এল ভয়াবহ তথ্য৷ রাজ্যের অষ্টন শ্রেনীর পড়ুয়াদের অনেকেই ভুলতে বসেছে অ-আ-ক-খ ও। কোনো অনুচ্ছেদ লেখা কিংবা অঙ্ক-ভুগোলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো দূর, বানান করে শব্দ পড়তে গিয়েও দাঁতকপাটি লাগার জোগাড় তাদের।
বেসরকারী সংস্থাটির ওই ‘অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্ট’ নামক সমীক্ষার ফলাফলে উঠে আসা তথ্যে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার জোগাড় রাজ্যবাসীর। ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর রিপোর্টটি প্রকাশিত হলেও করোনা পরিস্থিতিতে দুবছর পর আবারও প্রকাশিত হল সমীক্ষার ফলাফল। গত দুবছরে প্রায় ধুলোয় মিশে গেছে শিক্ষার মান। ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অক্ষর পড়তে অক্ষম প্রথম শ্রেনীর পড়ুয়াদের ৩২.১%, উল্টোদিকে প্রথম শ্রেণীর ৩৪.৪% অক্ষর চিনতে পারলেও অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫.৫%। অর্থাৎ ৯৫% অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াই আলাদা করে অক্ষর চিনতে অক্ষম। শব্দ পড়তে পারছে অষ্টম শ্রেণীর মাত্র ৯.৮% পড়ুয়া।
পশ্চিমবঙ্গের ১৭ টি জেলার পরিবার-ভিত্তিক সংগৃহীত তথ্যাবলীর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই রিপোর্ট। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ানো বাক্য পড়তে পারত ৬৬.২% ছাত্রছাত্রী,এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩% এ। অঙ্কের ক্ষেত্রেও অবস্থা শোচনীয়। আগে যেখানে ১-৯ অবধি সংখ্যা চিনতে পারত ৭৭.৮% পড়ুয়া এখন তা পারছে মাত্র ৬৮.৫%। অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের ৩৬.৯% ই বিয়োগ এবং ভাগ করতে অক্ষম।
রাজ্যে শিক্ষার্থীদের এহেন অবস্থা যে ‘ভালো খবর নয়’ তা সাফ জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের গ্লোবাল আ্যাডভাইসারি বোর্ডের সদস্য নোবেলবিজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শিক্ষার মানে এহেন পতনের কারণ কী? রিপোর্টটিতে বলা হয়, সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলের ৬৫.৫% পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন রয়েছে। টিভি রয়েছে ৫৬.৪% এর বাড়িতে। পড়ার বই ছাড়া অন্য পড়ার সামগ্রী উপস্থিত রাজ্যের কেবল ৩.১% ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে।
বিগত ২ বছর ধরে অনলাইনেই নেওয়া হয়েছে ক্লাস। তাই যে সমস্ত পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার নেই তারা এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। শুধু তাই ই নয়, বহুদিন যাবৎ স্কুলমুখো না হওয়ায় আগ্রহও কমেছে পড়াশোনায়। নিয়মকরে পড়তে বসেনি পড়ুয়াদের একটা বিরাট অংশ। ফলে দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে তারা ভুলতে বসেছে বাংলা বর্ণমালা থেকে শুরু করে সংখ্যা সবই। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি সরকারের তরফে।
ছাত্ররাই যেকোনো জাতির ভবিষ্যৎ। তবে করোন পরিস্থিতিতে বাংলার শিক্ষার মানের এহেন অবনতিতে বাঙালীর ভবিষ্যত যে কার্যতই অন্ধকার তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রাখছেন না ওয়াকিবহাল মহল