বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আরজি কর (RG Kar) কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছেন কলকাতার শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। এই সাজা ঘোষণার সময় তিনি জানিয়েছিলেন আরজি করের ঘটনাকে তাঁর বিরলের মধ্যে বিরলতম মনে হয়নি। একই সাথে আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণ কাণ্ডের মামলায় জাস্টিস দাস বলেছেন অভিযুক্তের আইনজীবীরা তেমন কোন কঠিন প্রশ্ন না করায় পার পেয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। এবার তা বিশ্লেষণ করে রাজ্যের প্রবীণ পুলিশকর্তা ও আইনজীবীরা মনে করছেন কয়েকটি বিষয়ে চেপে ধরলেই বিচার পর্বে আরজি কর কাণ্ডের রহস্য ভেদের জরুরী সূত্র উঠে আসতে পারত।
আরজি কর (RG Kar) কাণ্ডে সঞ্জয়ের হেডফোন ঘিরে উঠছে একগুচ্ছ প্রশ্ন
গত বছরের আগস্ট মাসে একটি ব্লুটুথ হেডফোনের সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের মতে সঞ্জয় রায়ের মোবাইলের ব্লুটুথ হেডফোন নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেই এড়ানো যেত। সে সময় কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীদের দাবি ছিল আরজি করের (RG Kar) নির্যাতিতার চাদরের তলা থেকেই মোবাইল ফোনের ব্লুটুথ সংযোগকারী ডিভাইসটি উদ্ধার হয়েছিল। যদিও সঞ্জয় দাবী করেছেন ওই ব্লুটুথ ডিভাইসটি তার নয়। একই রংয়ের অন্য ব্লুটুথ ডিভাইস ছিল তার।
প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের আরও দাবি বাজেয়াপ্ত হওয়া ওই ব্লুটুথ সংযোগকারী ডিভাইসটি কখন সঞ্চয়ের ফোনের সাথে কানেক্ট করা হয়েছিল সেটাও ফরেন্সিক পরীক্ষাতে স্পষ্ট হওয়ার কথা। একথা তদন্তকারী অফিসাররা স্পষ্ট ভাবে জানাননি। অভিযুক্তের আইনজীবীরাও আদালতে তদন্তকারীদের এই বিষয়ে তলিয়ে প্রশ্ন করেননি। আরজি করের (RG Kar) চিকিৎসক তরুণীর মৃত্যুর আগে নাকি পরে ওই হেডফোনের সাথে সঞ্জয়ের মোবাইল কানেক্ট করা হয়েছিল তা স্পষ্ট জানা গেলে সঞ্জয় জড়িত থাকার একটি প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারতো বলেও মনে করছেন ওই পুলিশকর্তা এবং কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবীরা।
৯ আগস্টের রাতে সঞ্জয় রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজন মহিলা পুলিশ অফিসার সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করার কয়েক ঘন্টা আগেই তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে সেটি ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। সঞ্জয় গ্রেফতার হওয়ার পরে ওই ফোন আবার বাজেয়াপ্ত করা হয়। এক্ষেত্রে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ওই মহিলা অফিসারের যুক্তি ছিল সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল তাই মোবাইলটি রেখে দেওয়া হয়েছিল। যদিও প্রবীণ আইনঅজ্ঞ এবং পুলিশ কর্তাদের দাবি ছিল তদন্তের আচরণবিধি অনুযায়ী গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
আরও পড়ুন: একি কাণ্ড! শৌচালয় বদলে হয়ে গেল তৃণমূলের পার্টি অফিস! যা হচ্ছে চোপড়ায়…
দাবি করা হচ্ছে সিবিআই-এর সূত্র মারফত-ও ওই মোবাইল ফোন থেকে তথ্য মুছে ফেলা বা রদবদল করা হতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে টালা থানার একজন তদন্তকারী অফিসারের জেনারেল ডায়েরির এন্ট্রির সময় এবং তার থানায় থাকার সময় নিয়েও। এই বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ বিচারক। আইনজীবী এবং প্রাক্তন পুলিশ কর্তারাও মনে করছেন এক্ষেত্রে তথ্য বিকৃতির আশঙ্কা থেকেই যায়। সিবিআইয়ের এক কর্তা জানিয়েছেন ওই অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তাঁর মতে পুলিশের আচরণে যে গোলমাল রয়েছে তা বিচারকের পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্যে উঠে এসেছে।
বিচারকের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যাচ্ছে, পুলিশের তদন্তের পর এই মামলায় (RG Kar) সিবিআই সেভাবে নতুন কোন তদন্ত করেনি। এক্ষেত্রে সিবিআই-এর কর্তাদের সূত্রে দাবি, তথ্য বিকৃতির অভিযোগ থাকায় টালা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) বাজেয়াপ্ত করে তা তিন দফায় ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। সেই কথা নিম্ম আদালতে কেস ডায়েরী ও লিখিত রিপোর্টের মাধ্যমে পেশ করা হয়। এক সিবিআই অফিসার জানিয়েছেন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ভিভিআর অনেকাংশে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলেও তিন ফরেনসিক রিপোর্টের পরীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এখনও ওই ফুটেজ নষ্ট করার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
‘দলের মধ্যেই ব্যাপক টাকার লেনদেন…’, মদনের বিস্ফোরক মন্তব্যে তোলপাড়