বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাস্তবে অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে, যা হার মানায় রূপোলি পর্দার সিনেমার গল্পকেও। এমনই এক গল্পের নায়ক রাজু সিংহ রাজ। হয়তো শুনতে শুনতে আপনার মনে পড়ে যেতে পারে ‘জাপানিজ ওয়াইফ’ এর কথা, কিংবা অন্য কোন সিনেমার গল্প। কিন্তু রাজুর জীবনে এটাই বাস্তব।
১৬ বছর বয়স থেকেই জয়পুরের রাস্তায় অটো রিক্সা চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় রাজু। ছোটবেলা থেকেই মন ছিল না পড়াশোনায়। যার ফলে বাবা-মা চেষ্টা করলেও সেভাবে পড়াশোনা শিখে ওঠা হয়নি। আর অটোরিক্সাকেই জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় রাজু। এভাবেই এগিয়ে চলছিল দিন। কিন্তু একদিন হঠাৎই সে দেখে, বিদেশ থেকে রাজস্থানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বেশি পছন্দ করেন ইংরেজি বলা অটোচালকদের।
সেই সূত্র ধরেই, মাধ্যমিকে ফেল করা রাজু শিখতে শুরু করে ইংরেজি। সেটা ছিল ২০০৮ সাল, তখন সে কি জানত একদিন তার জন্য অপেক্ষা করে আছে সুইজারল্যান্ড? ইংরেজি শিখতে শিখতে টুরিস্ট গাইডের কাজও শুরু করে রাজস্থানের ওই যুবক। মূলত অটোয় চড়িয়ে বিভিন্ন পর্যটকদের ঐতিহাসিক স্থানগুলি ঘুরিয়ে দেখানো। এটাই ছিল শুরুর দিনের গল্প।
কিন্তু হঠাৎই সেই অটোতেই আলাপ হয়ে যায় তার বিদেশিনী প্রেমিকার সঙ্গে। যিনি বর্তমানে রাজুর স্ত্রী। এনআরআই অ্যাফেয়ার্স নামক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজু জানান, “সিটি প্লেসে আমাদের প্রথম দেখা। ও ওর এক বান্ধবীকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে এসেছিল। সেখান থেকেই আমাদের যোগাযোগ হয়, আর আমরা কথা বলতে শুরু করি। ও ফ্রান্সে ফিরে যাবার পর আমরা স্কাইপের মাধ্যমে কথা চালিয়ে যাই। দুজনেই অনুভব করি, আমরা প্রেমে পড়েছি।”
এই দেখাই কার্যত বদলে দেয় রাজুর জীবন, যদিও এই লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ চালিয়ে যাওয়ার ছিল খুবই কঠিন। বারবার আবেদন করেও ফ্রান্সের ভিসা পাননি রাজু সিংহ রাজ। ফলতো প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হয়নি বহুদিন। কিন্তু তার টানে ফের ভারতে আসেন ওই ফরাসি বিদেশিনী। ২০১৪ সালে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এমনকি ওদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ফরাসি ভাষাও শিখতে হয় রাজুকে।
তবে এখন এই গল্পের যাকে বলে মধুরেণসমাপয়েৎ ঘটেছে। এখন এই দম্পতি থাকে জেনেভায়। রাজু একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করে। তার একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। যেখানে লোকজনকে রান্না শেখায় সে। রাজুর স্বপ্ন একদিন একটি সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্টের মালিক হবে সে।