টাটার সৌজন্যে “বিগ বুল” হয়ে তাকেই কড়া টক্কর দেন রাকেশ! চমকে দেবে ধনকুবেরের জীবনকাহিনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করার আগে সকলে তাঁকেই অনুসরণ করতেন। কারণ তিনি ছিলেন বাজারের “বিগ বুল”। পাশাপাশি, তাঁকে বলা হত ভারতের ওয়ারেন বাফেট-ও। গত রবিবারই আকাশে উড়েছিল তাঁর হাত ধরে শুরু হওয়া আকাশা এয়ারলাইন্সের বিমান। অথচ এক সপ্তাহের ব্যবধানেই চরম দুঃসংবাদ সামনে এল। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ভারতের অন্যতম ধনকুবের রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা (Rakesh Jhunjhunwala)। রবিবার সকাল ৬ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হন তিনি। জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

এদিকে, একদম শূন্য থেকে শুরু করে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের এই সাফল্যের গল্প নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করবে আগামী প্রজন্মকে। মাত্র ৫ হাজার টাকা নিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর সফর। পরবর্তীকালে তিনি দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয় হল, টাটা গ্রুপের মাত্র একটি শেয়ারই রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার ভাগ্য বদলে দেয়। যদিও, পরবর্তীকালে এভিয়েশন সেক্টরে পা দিয়ে তিনি টাটা গ্রুপের সাথেই কড়া টক্করে সামিল হয়েছিলেন। মূলত, টাটা গ্রুপ সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়া কিনেছে। এর আগেও সংস্থাটির দু’টি বিমান সংস্থা এয়ার এশিয়া ও ভিস্তারা রয়েছে। এমতাবস্থায়, ঝুনঝুনওয়ালার আকাশা এয়ারলাইন্সের পথচলা শুরু হওয়ার পরই বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন তা কড়া প্রতিযোগিতায় ফেলবে টাটাকে।

তাঁর বাবা টাকা দিতে অস্বীকার করেন: রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা ১৯৬০ সালের ৫ জুলাই মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগ করতেন। সেখান থেকেই রাকেশ স্টক মার্কেটে টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। এমতাবস্থায়, বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি ১৯৮৫ সালে ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর কোর্স করেন। এরপর তিনি শেয়ারবাজারে পা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও তাঁর বাবা তাঁকে টাকা দিতে রাজি হননি। বরং তিনি বলেন, “আগে নিজে অর্থ উপার্জন কর। তারপর শেয়ার বাজারে প্রবেশ কর।”

Untitled design 62 1280x720 1

শেয়ার বাজারে প্রথম ধাপ: রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা ১৯৮৫ সালে প্রথম শেয়ার বাজারে প্রবেশ করেন। শুরুতে তিনি মাত্র ৫,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন এবং ১৯৮৬ সালে প্রথম লাভ করেন। মূলত, রাকেশ টাটা টি শেয়ারটি ৪৩ টাকায় কিনেছিলেন এবং তিন মাস পর প্রতিটি শেয়ার ১৪৩ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে, তিনি ২ থেকে ২.৫ কোটি টাকা লাভ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তারপর তিনি সেসা স্টারলিট কোম্পানির চার লক্ষ শেয়ার এক কোটি টাকায় কিনে নেন এবং এই বিনিয়োগেও বিপুল লাভ করেন।

টাইটান বানিয়ে দেয় “বিগ বুল”: ২০০৩ সালে, রাকেশ ঝুনওয়ালা টাটা গ্রুপের আরেকটি কোম্পানি টাইটানে বিনিয়োগ করেন। আর এই একটি শেয়ারই তাঁর ভাগ্য বদলে দেয়। তিনি ৩ টাকা মূল্যের ৬ কোটি শেয়ার কিনে নেন। আজ এর একটি শেয়ারের মূল্য ১,৯৬১ টাকা। এই স্টকটি তাঁর প্রিয় স্টক ছিল। এছাড়াও, তাঁর পোর্টফোলিওতে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার ছিল। এর মধ্যে রয়েছে SAIL, Tata Motors, Tata Communications, Lupin, TV18, DB Realty, Indian Hotels, Indiabulls Housing Finance, Federal Bank, Karur Vysya Bank, Escorts Limited, Titan Company-এর মত কোম্পানি।

topimg 982 rakesh jhunjhunwala

টাটার সাথে টক্কর: রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা এভিয়েশন সেক্টরে প্রবেশ করে টাটা গ্রুপকে পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাঁর বিনিয়োগেই এয়ারলাইন কোম্পানি “আকাশা এয়ার” ট্রায়াল শুরু করে। সম্প্রতি এই এয়ারলাইন্সের ক্রুদের জন্য ইউনিফর্মও চালু করা হয়েছে। আকাশা এয়ারের লক্ষ্য হল সাশ্রয়ী মূল্যের বিমান পরিষেবা প্রদান করা। এই কোম্পানিতে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। অর্থাৎ টাটা গ্রুপের কোম্পানিগুলি থেকে অর্থ উপার্জনকারী ঝুনঝুনওয়ালা আকাশপথে টাটার সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করার জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।

মুম্বাইতে ১৪ তলা বাড়ি: রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা মুম্বাইয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকায় একটি ১৪ তলা বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের দোতলায় থাকতেন। তবে শীঘ্রই তাঁর নতুন ঠিকানা হতে চলেছিল মালাবার হিলে। শিল্পজগৎ ও কর্পোরেট জগতের একাধিক নামকরা ব্যক্তি এই এলাকায় বসবাস করেন। জানা গিয়েছে, এই বাড়ি তৈরির জন্য ঝুনঝুনওয়ালা ৩৭১ কোটি টাকায় জমি কিনেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মালাবার হিলকে মুম্বাইয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে এক বর্গফুট জায়গার দাম এক লক্ষ টাকারও বেশি। সজ্জন জিন্দাল, আদি গোদরেজ এবং বিড়লা পরিবারও মালাবার হিলে থাকেন।

ভোজনরসিক ছিলেন: খুব কম জনই জানেন যে, ঝুনঝুনওয়ালা তিনটি বলিউড ছবি প্রযোজনা করেছিলেন। সেগুলি হল, “ইংলিশ ভিংলিশ”, “শামিতাভ” এবং “কি অ্যান্ড কা”। পাশাপাশি, তিনি অত্যন্ত ভোজনরসিকও ছিলেন। রাকেশ স্ট্রিট ফুড, ধোসা এবং চাইনিজ খাবার পছন্দ করতেন। মুম্বাইয়ের পাও ভাজি ছিল তাঁর অন্যতম দুর্বলতা। এমনকি, অবসর সময়ে তিনি খাবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও দেখতেন। এমতাবস্থায়, রাকেশের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সব মহলেই।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর