বাংলাহান্ট ডেস্কঃ এক সময় ছিল রাণাঘাটের রাণু মণ্ডল (Ranu Mandal স্টেশানে ভিক্ষা করে দিন কাটত। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান রাণু মন্ডল। যার বাড়িতে কিছু মাস আগে লোকের ভিড় উপচে পড়ার মত। তিনি গান গেয়ে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে সংগীত পরিচালক হিমেশ রেশমিয়ার রেকর্ডিং স্টুডিয়োয় পৌঁছে যান রাণু মণ্ডল। কয়েক মাস যেতে না যেতেই অন্য চিত্র চোখে পড়ার মত। ফিরে দেখা আগের চিত্র। প্রায় অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তার আর কেউ খোঁজ নেয় না।
লকডাউন-কোরোনা সংক্রমণের ভিড়ে হারিয়ে যায় রাণু প্রসঙ্গ । এর মাঝেই খবর পাওয়া যায়, কেরালা থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ । এখন একপ্রকার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি । কখনও সবজি সিদ্ধ, কখনও বা মুড়ি খেয়ে খিদে মেটাচ্ছেন ।
উল্লেখ্য, রুপোলি পর্দার আলো এবার ছুঁয়ে ফেলে রাণুকে । রিয়্যালিটি শো-তে যান । সেখানে নজরে পড়েন হিমেশের । এরপর রাণাঘাট থেকে পাড়ি দেন মুম্বইয়ে । তাঁর এই যাত্রায় সবসময় সঙ্গে ছিলেন স্টেশনের ওই অপরিচিত যুবক অতীন্দ্র । এরপর হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে একটি গান রেকর্ড করেন তিনি। সেই “তেরি মেরি কাহানি” গানটিও হিট করে। এরপর নিজের নানা মন্তব্যে বারবার সোশাল মিডিয়ায় ট্রোল হন রাণু । রাতারাতি যে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ধীরে ধীরে কোথাও যেন তা ম্লান হয়ে যায় । মাস দুয়েক আগে শোনা যায়, মুম্বই থেকে কোনও এক অনুষ্ঠানের জন্য কেরালা গিয়েছিলেন তিনি । তারপর আর কোনও খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি ।
রাণু মণ্ডল বলেন, “কেরালা থেকে বাড়ি ফেরার পর টানা পাঁচদিন প্রায় না খেয়েই কাটাতে হয়েছে । কেউ খোঁজ নিতে আসেনি । এখনও ঠিকমতো খাবার পাই না। কোনওদিন ভাত জোটে । কোনওদিন জোটে না। মুড়ি কিংবা কোনও সবজি সিদ্ধ করে, তা খেয়েই থাকতে হয় । মাঝেমধ্যে কেউ এসে একটু চাল-ডাল সাহায্য করে যায়।” আজকাল আর রাণুর বাড়িতে কেউ ভিড় জমায় না । মাঝেসাঝে দু-একজন আসেন । তবে, আগের মতো আর কিছু নেই । বলছেন রাণুর প্রতিবেশী ।
মুহূর্তেই অনেককিছু পেয়ে বদলে গেছিল তাঁর জীবন । আজ কোথাও যেন আবার সেই পুরোনো দিনগুলো ফিরে এসেছে । জীবন বোধহয় এরকমই কিছু । তাই সেদিন স্টেশনের ভাইরাল হওয়া গান আজও অবলীলায় গেয়ে চলেছেন তিনি- “কুছ খো কর পানা হ্য়ায়, কুছ পা কর খোনা হ্যায়, জীবনকা মতলব তো আনা অর যানা হ্যায় ।”
কখনও রাস্তার পাশে, আবার কখনও রাণাঘাট স্টেশনে ঘুরে বেড়াতেন । গায়ে নোংরা ছেঁড়া জামা। আপন মনে গান গাইতেন । স্টেশন চত্বরে খাবার চেয়েই পেট চলত । একদিন রাণাঘাট স্টেশনে বসেই নিজের মনে গান গাইছিলেন রাণু মণ্ডল । “কুছ পা কর খোনা হ্যায়, কুছ খো কর পানা হ্যায়” । পাশে বসে থাকা অতীন্দ্র চক্রবর্তী নামে এক যুবকের মনে ধরে সেই গান । রাণুর গান মোবাইলে ভিডিয়ো করে ফেসবুকে আপলোড করেন তিনি । লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া এই গান রাতারাতি রাণুর জীবন বদলে দেয় । দিন কয়েকের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় তাঁর গানের ভিডিয়ো । সংবাদ মাধ্য়ম থেকে শুরু করে ছোটো ছোটো মিউজ়িক কম্পানি ভিড় জমাতে শুরু করে তাঁর বাড়িতে ।