রাজপ্রাসাদ থেকে সস্তার ভাড়া বাড়ি! সন্তানের বিশ্বাসঘাতকতায় আজ অসহায় অবস্থা Raymond কর্তার

বাংলাহান্ট ডেস্ক : সন্তানকে অন্ধবিশ্বাস করে লিখে দিয়েছিলেন নিজের সর্বস্ব। সেই সন্তানই যে এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করবে তা হয়ত কোনও দিন স্বপ্নেও কল্পনা করেননি বিজয়পত সিংহানিয়া। ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড রেমন্ড (Raymond) কর্ণধারের জীবন কোনও ট্রাজেডি সিনেমার থেকে কম কিছু নয়।

রেমন্ড (Raymond) কর্ণধারের ট্র্যাজিক জীবন

বিজয়পত সিংহানিয়ার (Vijaypath Singhania) নেতৃত্বে ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম পরিচিত ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে রেমন্ড। অত্যন্ত সুপরিচিত এই সংস্থা অচিরেই হয়ে ওঠে দেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম একটি বিশ্বস্ত নাম। বিজয়পত সিংহানিয়ার সুদক্ষ পরিচালনায় কোটি কোটি টাকার সংস্থায় পরিণত হয় রেমন্ড। পোশাক শিল্পের পাশাপাশি কামাসুত্র কন্ডোম, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, স্টিল ফ্যাক্টরিতেও রেমন্ডের অগ্রগতি ছিল ঈর্ষণীয়।

আরও পড়ুন : গিয়েছেন অক্সফোর্ডে ভাষণ দিতে! জানেন আসলে কতদূর পড়াশোনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

সেই কোটি কোটি টাকার সংস্থার কর্ণধারের এখন দিন কাটে ছোট্ট একটি ভাড়ার ফ্ল্যাটে। কৈলাস সিংহানিয়ার উদ্যোগে পথচলা শুরু করে রেমন্ড (Raymond)। ১৯৮০ সাল নাগাদ রেমন্ড সংস্থার যাবতীয় দায়িত্বভার এসে পড়ে বিজয়পত সিংহানিয়ার কাঁধে। তাঁর আমলেই ভারত তথা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যায় জনপ্রিয় এই পোশাক ব্র্যান্ড।

ফ্যাব্রিকের পাশাপাশি ১৯৮৬ সালে বিজয়পত সিংহানিয়ার হাত ধরে শুরু হয় সিংহানিয়া পার্ক অ্যাভিনিউ ব্র্যান্ড। বিজয়পত সিংহানিয়ার আমলেই ১৯৯০ সালে ভারতের বাইরে খোলে রেমন্ডের (Raymond) প্রথম শোরুম। শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, বিজয়পত সিংহানিয়ার সুদক্ষ পরিচালনায় একের পর এক নয়া নজির তৈরি করতে থাকে ভারতীয় ব্র্যান্ড রেমন্ড।

দেশের শিল্প জগতে অন্যতম পরিচিত নাম হয়ে ওঠে বিজয়পত সিংহানিয়া। এমনকি দেশের শিল্প ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার ২০০৬ সালে বিজয়পত সিংহানিয়াকে ভূষিত করে পদ্মভূষণ সম্মানে। তবে আজ সে সব অতীত। এমন নয় যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে রেমন্ড সংস্থা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

আরও পড়ুন : নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার! এবার জামিন চেয়ে আদালতে পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ’ এই অভিযুক্ত! কে জানেন?

এখনও দেশের শীর্ষ সংস্থাগুলির তালিকায় জ্বলজ্বল করছে রেমন্ডের নাম। তবে একদা রেমন্ড কর্তা বিজয়পত সিংহানিয়া এখন যাপন করছেন এক অভিশাপময় জীবন। সালটা ২০১৫। নিজের সংস্থার যাবতীয় দায়িত্ব বিজয়পত সিংহানিয়া তুলে দেন পুত্র গৌতম সিংহানিয়ার হাতে। গৌতম হয়ে ওঠেন রেমন্ডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

বিজয়পত সিংহানিয়া জানিয়েছিলেন, ছেলেকে অন্ধ বিশ্বাস করে সংস্থার যাবতীয় শেয়ার তাঁর নামে লিখে দেওয়াই ছিল জীবনের সবথেকে বড় ভুল। জানা যায়, সংস্থার দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পরই ফাটল ধরে বাবা-ছেলের সম্পর্কে। সামান্য একটি ফ্ল্যাট নিয়ে গৌতম ও বিজয়পতের অশান্তি এতটাই চরমে পৌঁছায় যে, বিজয়পতকে তাঁর ছেলে বের করে দেন রেমন্ড কর্তার আবাসস্থল জেকে হাউস থেকে।

Raymond Vijaypath Singhania lifestyle

বিজয়পত সিংহানিয়ার আরও অভিযোগ, তাঁর পুত্র গৌতম সিংহানিয়া বন্ধ করে দিয়েছে গাড়ি ও চালকের মাসোহারার বন্দোবস্তও। যে বিজয়পত সিংহানিয়া একদা দামি দামি বিমান-হেলিকপ্টার চেপে ছুটে বেরিয়েছেন, আজ তাঁকেই পায়ে হেঁটে করতে হয় সমস্ত কাজ। এমনকি সাধের জেকে হাউস থেকে বিতাড়িত হয়ে আজ বিজয়পত সিংহানিয়ার ঠাঁই হয়েছে ছোট্ট ভাড়ার ফ্ল্যাটে।

বিজয়পত সিংহানিয়ার এই ঘটনা শুনলে যেন মনে হবে কোনও হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্য শোনাচ্ছি আপনাদের। তবে যুগ যুগ ধরে মনুষ্যত্ব বিকিয়ে এখনও আমাদের চারপাশে রয়ে গিয়েছে অসংখ্য মীরজাফর। ইতিহাসের সেই ‘ধারা’ বজায় রেখেই হয়ত ফের একবার এই যুগেও জীবন যুদ্ধের ময়দানে বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি হলেন এক বাবা।

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর