বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় একাধিক প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছে বলে আদালতে জমা দেওয়ার চার্জশিটে দাবী করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি কখনো সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র নিজে সেই চেষ্টা করেছেন আবার কখনও অন্যদের তিনি প্রমাণ লোপাট করতে বাধ্য করেছেন। সিবিআই সূত্রে খবর, এই নিয়োগ মামলায় অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করেছেন। এই মামলায় আদালতে তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে তথ্য প্রমাণ লোপাটের মোট সাতটি পন্থার কথা উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁরা জানিয়েছেন বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ান থেকে মোট সাতটি উপায়ের কথা জানা গিয়েছে।
নিয়োগ মামলায় (Recruitment Scam) প্রমাণ লোপাটের ৭ পন্থা খুঁজে পেল CBI
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর দাবি কখনও এসএসসি আবার কখনও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ (Recruitment Scam) কিংবা অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রার্থীদের থেকে টাকা তোলা হয়েছে। সেই সমস্ত চাকরি বিক্রির কোটি কোটি টাকা গিয়েছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের হাতে। টাকার বিনিময়ে কেউ কেউ চাকরি পেয়েছেন আবার কেউ কেউ পাননি। কিন্তু তাঁরা চাকরি না পেলেও তাদের সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
জানা যাচ্ছে,ওই টাকা তোলার কাজে একাধিক এজেন্টকে ব্যবহার করেছিলেন কুন্তল ঘোষ,শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরুণ হাজরার মতো অভিযুক্তরা। অভিযোগ এই নিয়োগ মামলা (Recruitment Scam) নিয়ে ইডি এবং সিবিআই তদন্তে নামার পর থেকেই প্রমাণ লোপাটের জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে বলেই সিবিআইকে জানিয়েছেন ওই এজেন্টরা। সিবিআই-এর নথিতে যে সাতটি পন্থায় প্রমাণ লোপাটের কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল-
১) ডাইরিতে আগুন
নিয়ম মামলার (Recruitment Scam) তদন্তে নেমে ২০২৪ সালে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের এক সহযোগীকে জিজ্ঞাসা বাদ করেছিল সিবিআই। তার দেওয়া বয়ান অনুযায়ী তিনি অরুণ হাজরা এবং তার এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। কার কাছ থেকে, কবে, কত টাকা পেয়েছেন সেই সমস্ত হিসাব লেখা থাকতো ডায়েরিতে। তার কাছে এমন একাধিক ডায়েরি ছিল। কালীঘাটের কাকুর নির্দেশ অনুযায়ী পরে সেগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই একজন এজেন্টের কাছে থাকা ডায়েরি পুড়িয়ে দেওয়া হলেও তদন্তে নেমে অরুণের আরও চার জন এজেন্টের থেকে ওই ধরনের মোট ১০টি ডায়েরি উদ্ধার করে সিবিআই।
২) ঘুষের ভিডিও উধাও
এক সাক্ষীর বয়ান থেকে সিবিআই অফিসাররা জানতে পেরেছেন চাকরির জন্য ঘুষ নেওয়ার ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়। ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর দেওয়া বয়ানে এক সাক্ষী জানিয়েছেন, তিনি সুজয়কৃষ্ণের উপস্থিতিতে এক বার তাঁর এক সহযোগীকে ঘুষ দেওয়ার ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন তিনি। নিয়োগ মামলা (Recruitment Scam) পরে ইডি এবং সিবিআই-এর হাতে গেলে সুজয়কৃষ্ণ নাকি নিজে তাঁকে ওই ভিডিও ডিলিট অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: তসলিমা নাসরিনকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার দাবি, আজ সংসদে সরব হচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্য
৩) মোবাইলের আদিগঙ্গাপ্রাপ্তি
একই সাক্ষী গত বছর তার বয়ানে সিবিআইকে জানিয়েছেন, এক বার ঘুষের টাকা সুজয়কৃষ্ণের হাতে তুলে দেওয়ার সময়ে তিনি লুকিয়ে নিজের মোবাইলে সেই ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছিলেন। টাকা দিয়েও প্রার্থীরা চাকরি না পাওয়ায় সেই ভিডিয়ো দেখিয়ে তিনি সুজয়কৃষ্ণকে ‘ফাঁসানোর’ হুমকি দিয়েছিলেন। তার অভিযোগ, তখন সুজয়কৃষ্ণ তাকে পাল্টা হুমকি দিয়ে তার ফোনটি কেড়ে নিয়ে নর্দমার জলে ফেলে দিয়েছিলে। শুধু তাই নয়, সুজয়কৃষ্ণ নাকি নিজের দু’টি মোবাইলও আদিগঙ্গায় ফেলে দিয়েছিলেন।
৪) হার্ড ডিস্কের নথি লোপাট
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আরও একজন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর ওই মামলায় যে এজেন্টের বয়ান নেওয়া হয়েছে, তিনি সম্পর্কে এই সাক্ষীর মামা। সেই সাক্ষী সিবিআইকে জানিয়েছেন, মামার নির্দেশেই তিনি ল্যাপটপে চাকরি প্রার্থীদের (Recruitment Scam) নামের তালিকা তৈরি করেছিলেন। তার দাবি তার কাছে নাকি অন্তত দু’হাজার চাকরিপ্রার্থীর নাম ছিল। কিন্তু, ওই ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে সমস্যার কারণে তিনি তা ‘ফর্ম্যাট’ করেছিলেন। পরে অনেক চেষ্টা করেও নাকি সেই প্রার্থীদের নামের তালিকা আর উদ্ধার করা যায়নি।
৫) মোবাইলের নথি
লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির শীর্ষপদে ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। ওই সংস্থার এক মহিলা কর্মী তার বয়ানে জানিয়েছেন, একাধিক এজেন্টের ইমেল আসতো তার কাছে। সুজয়কৃষ্ণের নির্দেশ মেনে সেই ইমেল প্রিন্ট করে মুদ্রিত নথি তাকে দিতেন তিনি। ওই ইমেল থেকেই মহিলা জানতে পেরেছিলেন, সুজয়কৃষ্ণ প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, এসএসসি, গ্রুপ সি, গ্রপ ডি কর্মী নিয়োগের (Recruitment Scam) বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। একইসাথে তিনি জানান, জনৈক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নিজের মোবাইল থেকে যাবতীয় ছবি এবং হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট মুছে ফেলতে হয়েছিল তাকে। কুন্তল, অরুণ কিংবা অরবিন্দ রায়বর্মণেরা যে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের দফতরে যেতেন তা কাউকে বলা বারণ ছিল। অভিযোগ, ওই সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘সুদীপ একদম সুস্থ..’ খোদ সাংসদের স্ত্রী জানানোর পরেও মানতে নারাজ কুণাল!
৬) ইমেল অ্যাকাউন্ট বন্ধ
সিবিআই জানতে পেরেছে, প্রার্থীদের নাম, টাকা দেওয়া-নেওয়ার নির্দেশ ইত্যাদি বেশিরভাগই ইমেলে পাঠানো হত। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে একাধিক সাক্ষী ইমেল মুছে দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
৭. সিসিটিভি বন্ধ
সেপ্টেম্বর মাসে আর এক সাক্ষী সিবিআইকে জানিয়েছেন, ঘুষের টাকা নিয়ে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের দফতরে গেলে ওই সময়ে সুজয়কৃষ্ণ তাঁর দফতরের সমস্ত সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দিতেন। এক মহিলাকর্মীও সিবিআইকে একথা জানিয়েছেন।