পার্থর বছর পূর্তি! জঙ্গি মুসার তাড়া থেকে ‘মোটকা দা টুকি’, এজলাসে প্রেম, ঘুরে দেখা গ্রেফতারির এক বছর

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আগের বছর ২১ জুলাই আর এবছর ২১ জুলাই, এক বছরের এই সময়ের মধ্যে পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছু। ২০২২ শহিদ সমাবেশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছিলেন, ‘আমাকে ইডি, সিবিআই (ED-CBI) দিয়ে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা কোরো না। আমি ওসব ভয় পাই না। যারা ডরপোক, তারা ভয় পায়’। আর তার ঠিক একদিন পরেই কাকতালীয় ভাবে নিয়োগদুর্নীতি মামলায় তৎকালীন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) বাড়িতে হানা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।

প্রায় ২৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পর ২৩ জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment Scam) গ্রেফতার করে ইডি। নাকতলার বাড়ি থেকে সিজিও কমপ্লেক্স-এ নিয়ে যাওয়া হয় শাসকদলের মন্ত্রীকে। এরপর পার্থবাবুর সূত্র ধরেই উঠে আসে ‘মডেল’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) নাম। এরপর অর্পিতার ফ্ল্যাটেও পৌঁছে যান গোয়েন্দারা।

আর সেদিনই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় টাকার পাহাড়। অর্পিতার টালিগঞ্জে ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে হিসাববহির্ভূত কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। রাত, দিন এক করে টাকা গোনা চলে পার্থ ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। উদ্ধার হয় কেজি কেজি শোনার গয়না। এরপরই অর্পিতাকে গ্রেফতার করে ED।

এখানেই শেষ নয়, পরদিন অর্পিতার রথতলার ফ্ল্যাটেও হানা দেয় ইডি। দুটি ফ্ল্যাট মিলিয়ে উদ্ধার হয় নগদ ৫০ কোটি টাকা এবং কোটি কোটি টাকার সোনা। উদ্ধার করা হয় একাধিক দলিল। ফ্রিজ করা হয় দুজনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। বাংলায় প্রথমবার এইরকম ঘটনা হতে থেকে ‘থ’ হয়েছে গিয়েছিল গোটা রাজ্যবাসী। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই ছিল প্রথম হেভিওয়েট গ্রেফতারী। এরপর একে একে জেলে গিয়েছেন তৃণমূলের বহু নেতা, বিধায়ক সহ শিক্ষা দফতরের পদাধিকারী।

গ্রেফতার হওয়ার একবছর পরও আজও জেলের ঘানি টেনেই দিন কাটছে পর্থের। অন্যদিকে এই গোটা এক বছরে ঘটে গিয়েছে কতকিছু। কিছুমাস আগে প্রেসিডেন্সি জেলেরই কিছু সহবন্দি তাকে ‘চোর, চোর’ বলে অনবরত টিপ্পনি কাটত। ‘‌মোটকা’ দাদা বলেও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে অতিষ্ট করে তোলে জেলে থাকা কিছু ছিঁচকে চোরেরা। যদিও এই নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো হয়।

অন্যদিকে, গত ফেব্রুয়ারী মাসে প্রেসিডেন্সি জেলে মল ছুড়েছিল বন্দি জঙ্গি মুসা। সেই ঘটনার মধ্যে পড়ে গিয়ে পায়ে চোট পান পার্থ। থুতনিতে ব্যাথা পান তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব। আবার এবছর জানুয়ারিতে রক্ত জল করা শীত থেকে বাঁচতে আদালতে একটি খাটের আবেদন (Bed Apply) করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও তা দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। এরপর মার্চ মাসে আবার পার্থ-অর্পিতার ভার্চুয়াল প্রেমে ভাসে এজলাস। ভালো-মন্ডল সবমিলিয়ে গ্রেফতারির এক বছর।

২২ এর জুলাই থেকে ২৩ জুলাই। একাধিকবার জামিনের আবেদন করেও কোনও সুরাহা পাননি পার্থ। উল্টে যত দিন যাচ্ছে নিত্যনতুন অভিযোগ জুড়ছে সেই তালিকায়। সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থর বিচার শুরুর অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এবার এই এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শেষ কোথায়, সেই দেখার অপেক্ষায় কোটি কোটি বঙ্গবাসী।


Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর