বাংলা হান্ট ডেস্কঃ যত দিন যাচ্ছে ততই ঘনীভূত হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) রহস্য। অভিযুক্তদের তালিকায় জুড়ছে নিত্যনতুন নাম। দিন দিন লম্বা হচ্ছে সেই তালিকা। শাসকদলের নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রোমোটার, ইঞ্জিনিয়ার, অভিনেতা-অভিনেত্রী। বাদ নেই কেউই। সম্প্রতি, আরও এক নতুন নাম উঠে এসেছে বাংলার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে, নীলাদ্রি দাস (Niladri Das)। আর একেই দুর্নীতির পান্ডা বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
বরানগরের বাসিন্দা নীলাদ্রি গাজিয়াবাদের ওএমআর (OMR) শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসার ভাইস প্রেসিডেন্ট। সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে ২০১৯ সালে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির (CID) হাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, সরকারি চাকরি-বিক্রির স্কুল খুলে ফেলেছিলেন নাইসা-র নীলাদ্রি।
তদন্তকারী সূত্রে খবর, সরকারি চাকরির রীতিমতো রেট চার্ট বানিয়ে চাকরি বিক্রি করতেন নীলাদ্রি ও তার সঙ্গীরা। কোন চাকরির রেট কত জানেন? জানা গিয়েছে, প্রাথমিকে শিক্ষক পদে চাকরির রেট ছিল ১০ লক্ষ টাকা। খাদ্য দফতরে ফুড সাব ইন্সপেক্টর পদে চাকরির জন্য ১১ লক্ষ, মোটর ভেহিকলসে ইন্সপেক্টর পদে চাকরির জন্য ১২ লক্ষ, জেলাশাসকের দফতরে চাকরির জন্য ৭ লক্ষ, সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য ১৩ লক্ষ, পরিবহণ দফতরের অন্যান্য পদে চাকরির জন্য ৫ লক্ষ, রাজ্য পুলিশে চাকরির জন্য ৮ লক্ষ, সিভিক ভলান্টিয়ারের জন্য ৩০ হাজার ও পুরসভায় ক্লার্কের চাকরির রেট ছিল দেড় লক্ষ টাকা ধার্য ছিল।
২০১৯ সালেই এই দুর্নীতির দায়ে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা সিআইডি হাতে একে একে গ্রেফতার হয় নীলাদ্রি ও তার ৯ সঙ্গী। তবে নীলাদ্রির বিরুদ্ধে চাকরি প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও গ্রেফতার হওয়ার কিছু সময় পর হাইকোর্টে জামিন পেয়ে যান তিনি। সূত্র মারফত খবর, সেই সময় রাজ্যের কোনো এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির কথাতেই হটাৎ সেই দুর্নীতির তদন্ত স্থগিত করতে হয় সিআইডিকে। তবে এবার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে ফের উঠে এল সেই নীলাদ্রির নাম। তদন্তকারীদের ধারণা শিক্ষক কেলেঙ্কারির ওএমআর শিট বিকৃত করার মূল মাথা এই নীলাদ্রি।
বর্তমানে নীলাদ্রিকে গ্রেফতারের পর সিবিআই সূত্রে দাবি, চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা টাকা দিতেন, তাদের নাম স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে জানানো হত নাইসার ভাইস প্রেসিডেন্ট নীলাদ্রিকে। এরপর নীলাদ্রি সেই সুপারিশগুলি মেসেজ করে নাইসা-র কর্মীদের পাঠাতেন। তারপর সেই নির্দেশ মতোই সেখানের কর্মীরা সার্ভারে থাকা নম্বর পাল্টে ফেলতেন। গোটা দুর্নীতির পক্রিয়া এমনভাবেই চলত বলে দাবি তদন্তকারীদের। সূত্রের খবর, স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা নীলাদ্রির কাছে নিজেদের সুপারিশ পাঠাতেন।
শুধু তাই নয় সূত্রের দাবি, গত ২ দিন ধরে বরানগরের নীলাদ্রিকে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মোবাইল তল্লাশি করে বিস্ফোরক সব তথ্য সামনে এসেছে। যা চলতে থাকা তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এখন এই নীলাদ্রির ওপর ভর করে বাংলার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত কোন নয়া মোড় নেয় সেটাই এবার দেখার বিষয়।