সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ বোলপুর থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই রয়েছে রেল স্টেশেন। সেখানেই প্রকাশ্যে মায়ের সামনে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল নিউ লাইফ নার্সিং হোমের মালিক বোলপুরের নীচুপট্টীর বাসিন্দা শ্যামল রায়ের (৫০) বিরুদ্ধে। অভিযোগ,এই ঘটনাটি
প্রতিবাদ করায় ওই নির্যাতিতা ছাত্রীকে ও তাঁর মাকেও হেনস্থা করে। সমস্ত ঘটনাটি বোলপুর থানায় অভিযোগ করতে যায় ওই নির্যাতিতা ও তাঁর মা। কিন্তু পুলিশ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এই অভিযোগটি নেয়নি। পরে ওই নির্যাতিতা ছাত্রী সমস্ত ঘটনা তার ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে এই বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে বোলপুর থানার পুলিশ। নেওয়া হয় অভিযোগ।

ছবিঃ নির্যাতিতার ফেসবুক পোস্ট।
নির্যাতিতা ছাত্রীর মায়ের কথায়,”রাত ৯ টায় বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে করে কলকাতা থেকে আমি ও আমার মেয়ে ফিরছিলাম বোলপুরে। বোলপুর স্টেশনে নেমে আমি ও আমার মেয়ে হেঁটে শান্তিনিকেতনের বাড়ি ফিরছিলাম। মাঝপথে বোলপুর থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই আমার সামনে আমার মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বছর ৫০ এর এক ব্যক্তি। তড়িঘড়ি স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়ে চলে যায় ঘটনাস্থল থেকে। এরপরেই আমরা বোলপুর থানায় যায় অভিযোগ দায়ের করতে। কিন্তু
পুলিশ আমাদের জানায়, মামলা রুজু হলে সময় মত না এলে আমার মেয়েও গ্রেপ্তার হয়ে যাবে। কারণ আমার মেয়ে কলকাতায় পড়াশোনা করে।তাই যদি ঠিকমতো হাজির না হয় সেই ভয়ে বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করিনি। কিন্তু বিষয়টির প্রতিবাদ হওয়া দরকার। সেইজন্য আমার মেয়ে সমস্ত ঘটনাটি ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।” যদিও এই ঘটনাটি ফেসবুকে পোস্ট করতেই রীতিমত নিন্দার ঝড় উঠেছে শহর জুড়ে।
নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর মা আরও জানান, “সমস্ত ঘটনার পর আমাদেরকে স্থানীয়রা সাহায্য করেননি। বরং ওই ব্যক্তিটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আমি চাইছি, বোলপুরে প্রশাসন ঠিকমতো ওনাদের দায়িত্ব পালন করুক। আমার মেয়ের সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে কাল যেনো অন্য কোন মেয়ের সঙ্গে না ঘটে।”
নির্যাতিতা ওই ছাত্রী জানায়, “প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করে ওই ব্যক্তি আমার মায়ের সামনেই। ঘটনার সময় স্থানীয় মানুষজনকেও পাশে পাইনি। অভিযোগটি নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ বিভিন্ন কথা বলে।এই ভয়ে অভিযোগ করিনি। পরে বাড়ি এসে সমস্ত ঘটনাটি
ফেসবুকে লিখে এর প্রতিবাদ করি। শান্তিনিকেতনে আমি ছোটো থেকেই আছি। আমি টিউশনি পড়িয়ে অনেক রাতে বাড়িও ফিরেছি। কিন্তু এই রকম ঘটনার সম্মুখীন কোনো দিন হতে হয়নি। এখন অনেক আতঙ্কের মধ্যে আছি।”
বোলপুরের এক স্কুল পড়ুয়া জানান, “এইরকম ঘটনা বোলপুরে প্রথম নয়। প্রশাসন একটু সতর্ক হন এই বিষয়ে যাতে মেয়েদেরকে এই রকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।”
ছবিঃ অভিযুক্ত শ্যামল রায়ের বাড়ি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শ্যামল রায়ের সঙ্গে ওনার বাড়িতে কথা বলতে গেলে ওনার পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয় ও নীচে এসে ওনার গাড়ির ড্রাইভার জানান, “উনি খুব অসুস্থ। ওনার শারিরীক অবস্থা ভালো নয়। তাই কথা বলতে পারবেন না।”
এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠছে মেয়েদের প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।