বাংলা হান্ট ডেস্ক: বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) মনিটারি কমিটির বৈঠকের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ফলাফল ঘোষণা করে RBI গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন যে, বৈঠকে নীতিগত সুদের হার বা রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা ০.৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রেপো রেট বর্তমানে ৪.৪০ থেকে বেড়ে ৪.৯০ হবে। যার ফলে লাফিয়ে বাড়তে চলেছে ঋণের EMI-এর বোঝা। উল্লেখ্য যে, গত ৬ তারিখ থেকে দেশের আর্থিক নীতির সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এদিন ছিল বৈঠকের শেষ দিন। আর সেখানেই এই ঘোষণা করেন গভর্নর।
একমাসের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি:
দেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মে মাসে RBI কোনো পূর্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই MPC-র একটি বৈঠকের আয়োজন করে এবং সেখানে রেপো রেট ০.৪০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা করা হয়। যার ফলে ২০২০ সাল থেকে এই রেট ৪ শতাংশের ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন স্তরে থাকার পরে, তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৪০ শতাংশে পৌঁছে যায়। এদিকে, এই বৃদ্ধির পরেও RBI গভর্নর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, জুনে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও রেপো রেট আরও বাড়ানো হতে পারে।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির উল্লেখ:
MPC-র বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে গভর্নর জানান, দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ক্রমাগত বাড়ছে এবং বিশ্বজুড়ে চলা বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাপ্লাই চেন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে, RBI-কে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, দেশে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার গত এপ্রিল মাসে আট বছরের সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে ৭.৭৯ শতাংশে পৌঁছেছে। অপরদিকে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির স্তর ১৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এর পাশাপাশি তিনি দেশে অপরিশোধিত তেলের ক্রমবর্ধমান দাম এবং টমেটোর দাম আকাশচুম্বী হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
MSF বেড়েছে ৫.১৫ শতাংশে:
এই প্রসঙ্গে গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি এখন পুনরুদ্ধারের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এদিকে, রেপো রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি, RBI MSF ৫০ bps বাড়িয়ে ৫.১৫ শতাংশে এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (SDF) ৪.৬৫ শতাংশে উন্নীত করেছে।
বাড়বে EMI-এর বোঝা:
এদিকে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তের ফলে সুদের হার রাতারাতি বৃদ্ধি পাবে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। অর্থাৎ, আগে কোনো ব্যক্তি ঋণ নিয়ে থাকলে এই রেপো রেট তার ওপর প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, এবার থেকে তাঁর EMI বা মাসিক ঋণের কিস্তির পরিমানও আরও বেশি হবে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে পুরোনো ঋণের জন্য প্রতি মাসে বেশি টাকা গুণতে হবে ঋণ গ্রহীতাদেরকে। যদিও, এই প্রসঙ্গে গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মুদ্রাস্ফীতির হার:
RBI-র মতে, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৩ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ হবে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এটি ৭.৪ শতাংশ এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে এটি আনুমানিক ৬.২ শতাংশে থাকতে পারে। পাশাপাশি, চতুর্থ ত্রৈমাসিক অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চের মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাসে এটি ৫.১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫.৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
GDP বৃদ্ধির পূর্বাভাস:
RBI, GDP বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.২ শতাংশেই বজায় রেখেছে। এই প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে GDP বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ১৬.২ শতাংশ। পাশাপাশি, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৬.২ শতাংশ, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৪.১ শতাংশ এবং চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এই হার ৪ শতাংশ হিসেবে অনুমান করা হয়েছে।