বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়া তরুণীর ধর্ষণ-হত্যাকান্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে (Sanjay Roy) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার শিয়ালদা আদালত। তারপর থেকেই তার সম্পর্কে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যাচ্ছে আরজি কর কান্ডে দোষী সঞ্জয় রায় একসময় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল। আদালতের নির্দেশের কপির ভিত্তিতে প্রকাশ্যে এসেছে আরও এক বিস্ফোরক তথ্য। যা থেকে জানা যাচ্ছে, এই শক্তিশালী সঞ্জয় তার শক্ত ডান হাত দিয়েই তিলোত্তমার মুখ চেপে ধরেছিল, টিপে ধরেছিল গলাও।
বক্সিং চ্যাম্পিয়ন সঞ্জয় (Sanjay Roy) এক হাতেই গলা-মুখ টিপে ধরেছিল তিলোত্তমার!
আদালত আগেই জানিয়েছে আরজি কর কান্ডে তিলোত্তমার মৃত্যুর জন্য সঞ্জয় রায় (Sanjay Roy) একমাত্র দোষী। তার স্বপক্ষে যুক্তিও দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে সঞ্জয় রায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের দাবি তাঁদের মেয়ের মৃত্যুর জন্য সঞ্জয় রায় একমাত্র দোষী নয়। এই ঘটনার পিছনে আরও অনেকে রয়েছে বলে তাঁদের বিশ্বাস। এই কারণে তাঁরা চান এই ঘটনার আরও তদন্ত হোক।
শিয়ালদা আদালতের এডিজে (১) আদালতের বিচারক তাঁর নির্দেশে তুলে ধরেছেন সঞ্জয় রায় (Sanjay Roy) একাই খুন করেছিল। নির্যাতিতার ধর্ষণ এবং যৌন অত্যাচারের পিছনে সে একাই রয়েছে। এর সাপেক্ষে তুলে ধরা হয়েছে বৈদ্যুতিক প্রমাণ ও জৈবিক প্রমাণ। আদালতে বিচারপর্ব চলাকালীন সঞ্জয় রায়ের সামনে বেশ কিছু নথি তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ২০০৪ সালে দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী বক্সিং ক্লাব আয়োজিত বক্সিং প্রতিযোগিতায় সে রানার্স আপ অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কিনা? উত্তরে আদালতকে সঞ্জয় জানিয়েছিল সে বক্সিং এর চ্যাম্পিয়ন ছিল। আর সে একজন ডানহাতি।
আরও পড়ুন: পাল্টে যাচ্ছে নিয়ম? উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত সংসদের
সিবিআই আদালতকে আগেই জানিয়েছিল একসময় ডান হাতে নিয়মিত বক্সিংয়ের অভ্যাস করা সঞ্জয় দারুন শক্তিশালী। তার হাতও ছিল যথেষ্ট শক্ত। নির্দেশের কপিতে আদালত জানিয়েছে সঞ্জয়ের (Sanjay Roy) আইনজীবী জানান, নির্যাতিতার শরীরে যে সমস্ত আঘাতের চিহ্নগুলি পাওয়া গিয়েছে তা একজনের কাজ নয়। অনেকজন মিলেই মারধর করেছে তাঁকে। তখন সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিল ওই ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সঞ্জয় একাই দায়ী। ফরেন্সিক ও চিকিৎসকদের নিয়ে সিবিআইয়ের সুপারিশে তৈরি একটি বিশেষজ্ঞ টিম এমআইএমবি তার সপক্ষেই আদালতকে একথা জানিয়েছিল।
দু’পক্ষের সাওয়ালের পর আদালতের বক্তব্য ছিল ময়নাতদন্তের চিকিৎসকদের মতে নির্যাতিতা বাধা দেওয়ার ফলে তাঁর মুখ, নাক ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জানানো হয় তিলোত্তমার শরীরে ওই আঘাত করা হয়েছে কোন শক্ত ও সবল ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে। যা বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়। তবে এই আঘাতের ফলে দেহের ভিতরে রক্ত বেরিয়েছে, তার প্রমাণও মিলেছে। ময়নাতদন্তের চিকিৎসক একটি ছবি তুলে ধরে দেখিয়েছেন নির্যাতিতার মুখ ও গলায় একাধিক আঙুলের নখের দাগ রয়েছে। এটা সম্ভব যখন কোনো একজন ব্যক্তি তার ডান হাত দিয়ে গলা ও মুখ টিপে ধরে। ফলে একজন ব্যক্তি ওই খুনের ঘটনার পিছনে ছিল বলে দাবি করা হয়। বিশেষজ্ঞ টিম এমআইএমবি-র এক কর্তাও এই বিষয়ের সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালত জানিয়েছে, নির্যাতিতা এক ব্যক্তির দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর সেই ব্যক্তি অর্থাৎ সঞ্জয় রায় তাঁকে গলা টিপে ও শ্বাস রোধ করে খুন করেছিল।