বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছে, এখনও কিনারা হয়নি আর জি কর মামলার (RG Kar Case)। ৯ অগস্ট হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ৩১ বছরের তরুণী চিকিৎসকে ধর্ষণ করে খুনের (Doctor Rape and Murder Case) ঘটনা ঘটে। এখনও পর্যন্ত গোটা ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। চলছে সিবিআই তদন্ত। এরই মাঝে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে এবার বিস্ফোরক তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে।
সিবিআই সূত্রে খবর, গত ৯ অগাস্ট ঘটনার দিন সকালে এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে ফোন করেছিল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। ফোন করে সঞ্জয় নাকি বলে, “আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। লোকে আমার সম্পর্কে যাই ভাবুক না কেন, আমি কিন্তু তেমন নই। আমি আপনাকে দিদি বলে ডাকতে পারব না।” এতটুকু বলেই ফোন কেটে দেয় সঞ্জয়।
ইতিমধ্যেই ওই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডেকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। রেকর্ড করা হয়েছে তার বয়ানও। জিজ্ঞাসাবাদে ওই মহিলা জানিয়েছেন, আরজি কর হাসপাতালে জুলাই মাস থেকে তার এক আত্মীয় ভর্তি ছিল। সেই সময়ই তার সঞ্জয়ের সঙ্গে পরিচয়। ফোনেও কথা হত তাদের। তাহলে ৯ অগাস্ট তাকে ফোন করে কি আর জি করের ঘটনার বিষয়েই কিছু জানাতে চেয়েছিল সঞ্জয়? প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে খবর, ৯ অগস্ট ভোর তিনটে ২০ মিনিটে আরজি কর হাসপাতালে এসেছিল সঞ্জয়। হাসপাতালের মোট ৫৩ সিসিটিভি ক্যামেরায় তার গতিবিধি ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজের ভিত্তিতেই সম্প্রতি নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। সেখানে ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয়কেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
হাসপাতালের সমস্ত CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন রাত ৩টে ২০ মিনিট থেকে শুরু করে ভোর ৪টে ৩২ মিনিট পর্যন্ত সঞ্জয়ের গতিবিধি সম্পর্কে তারা জানাতে পেরেছে। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় সেই রাতে সঞ্জয় রায় হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই সময় তার হাতে ছিল হেলমেট। গলায় ঝোলানো ছিল একটি ব্লু টুথ ইয়ারফোন। সেই সময় তাকে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এরপর ভোর ৩টে ৩৬ মিনিট নাগাদ ভেতরে চলে যায় সঞ্জয়।
এরপর ভোর ৪টে ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ড থেকে ভোর ৪টে ৩ মিনিট ৪৯মিনিটের মধ্যে সঞ্জয়কে ওয়ার্ডের দিকে যেতে দেখা যায়। সেই সময়ও তার গলায় ঝুলছিল হেডফোন আর হাতে হেলমেট। এরপর ভরে সঞ্জয়কে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতেও দেখা যায়। তবে সেই সময় তার গলায় হেডফোন ছিল না। ৫৩ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই সময়ের মধ্যেই ধর্ষণ-খুন হয়েছে।
ঘটনার পর সঞ্জয়ের ওই ইয়ারফোনটি তরুণী চিকিৎসকের দেহ যেখানে পাওয়া যায় সেখানের নীল রঙের একটা ম্যাট্রেসের নীচ থেকে পাওয়া যায়। এরপরই গ্রেফতার করা হয় সঞ্জয় রায়কে। আদালতে সিবিআই এর দেওয়া প্রথম চার্জশিটে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে একমাত্র সিভিক সঞ্জয় রায়কেই। তবে কি করে একজনের পক্ষে হাসপাতালে ঢুকে এই নারকীয় ঘটনা ঘটানো সম্ভব সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। সঞ্জয়ের সাথে আরও কেউ যুক্ত ছিল কি না, ঘটনার আগে বা পরে কেউ সঞ্জয়ের সাথে দেখা করেছিল কি না সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বহুদিনের দাবি! একধাক্কায় সরকারি কর্মীদের ৭ গুণ ভাতা বাড়াল রাজ্য সরকার, জারি বিজ্ঞপ্তি
এদিকে, জেলের ভিতর নাকি দমবন্ধ হয়ে আসছে আরজি কর খুন ও ধর্ষণে ধৃত সঞ্জয়ের। সম্প্রতি কারারক্ষীদের কাঁদতে কাঁদতে সে বলেছে, ‘জেলের ভিতরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। জেলে থাকতে ভাল লাগছে না। জেল কর্তৃপক্ষ সব আবেদনই খারিজ করে দিচ্ছে। আমার স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করার অভ্যাস। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায় নাকি?।’