‘বডি তুলে তাড়াতাড়ি..’ যা নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ সন্দীপ ঘোষ! বিস্ফোরক তথ্য সামনে

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আরজি কর কান্ডে (RG Kar Case) সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করার পর ইতিমধ্যেই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। যদিও তিলোত্তমার বাবা-মা থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব,সহকর্মী সকলেই শুরু থেকে দাবি করে আসছেন তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। তারা এখনো বিশ্বাস করেন এই ঘটনার জন্য সঞ্জয় একা নয়, দায়ী আরও অনেকে। শিয়ালদহ আদালতের বিচারকের নির্দেশনামার নানা অংশ থেকে সেই সন্দেহ আরো জোরালো হয়ে উঠেছে।

আরজি কর কান্ডে (RG Kar Case) তিলোত্তমার বডি মর্গে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল সন্দীপ ঘোষ?

নির্দেশনামার ৩২ নম্বর পাতায় দেখা গিয়েছে আরজি কর (RG Kar Case) মেডিক্যাল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিনের অ্য়াসোসিয়েট প্রফেসর সুমিত তপাদার সাক্ষ্যদানের সময় জানিয়েছেন তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর তিনি তড়িঘড়ি ফোন করেছিলেন আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। সন্দীপ ফোন না তোলায় তিনি মেসেজে লিখেছিলেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ৫ মিনিটের মধ্যে ফোন করুন’। সুমিতকে সন্দীপ কলব্যাক করেন। তারপর ঝামেলা এড়াতে দ্রুত মৃতদেহ মর্গে পাঠাতে বলেছিলেন সন্দীপ। বয়ানে এমনটাই জানিয়েছেন ওই সাক্ষী। যদিও সেইসময় তিনি সন্দীপকে জানান ইতিমধ্যে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। তদন্ত ছাড়া দেহ মর্গে পাঠানো যাবে না।

আইনজীবী সাব্বির আহমেদ এপ্রসঙ্গে বলেন, পুলিশ যতক্ষণ না তদন্ত করছে, ততক্ষণ ডেডবডি মর্গে পাঠানো যাবে না। এটা প্রমাণ হিসেবে রয়েছে। জজসাহেব এটা রেকর্ডও করেছেন।’ চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক প্রধানের প্রথম প্রতিক্রিয়া যা হওয়া উচিত ছিল তার সঙ্গে এটা মানানসই নয়। মেয়েটি বেঁচে আছে কিনা, বাঁচানোর সুযোগ আছে কিনা সেই চেষ্টা করা উচিত ছিল। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত। পুলিশ ঠিক করবে দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা।’

তিলোত্তমার বাবা অভিযোগ করেছিলেন ৯ আগস্ট সকালে আর আরজি কর (RG Kar Case) মেডিকেল কলেজের এক এসিস্ট্যান্ট সুপার তাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরপর তাঁদের মেয়েক শেষবারের মতো তাঁদের দেখতেও দেওয়া হয়নি। ফোনের কথোপকথনে যে রেকর্ড সামনে এসেছে সেখানে নির্যাতিতার বাবাকে তখন নাকি বারবার বলা হয়েছিল, ‘আপনার মেয়ে … উনি সুসাইড করেছেন হয়তো। মারা গেছেন। পুলিশ রয়েছে, আমরা সবাই হাসপাতালের সামনেই রয়েছি। আপনারা যতটা তাড়াতাড়ি পারবেন চলে আসুন।’

নির্দেশ নামার ৩৩ নম্বর পাতায় এক সাক্ষী তার বয়ানে জানিয়েছেন, ‘কেন নিহত চিকিৎসকের বাবাকে বলা হলো মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তার প্রতিবাদ করেন তিনি।’ আইনজীবী সাব্বির আহমেদ জানান ওই মুহূর্তে যারা ওখানে ছিল তাদের দায়িত্ব ছিল। হঠাৎ করে আত্মহত্যা বলে দেওয়ার নরপথ্যে কিছু প্রচেষ্টা ছিল না এটাও বলা যাচ্ছে না।’

আরও পড়ুন: বক্সিং চ্যাম্পিয়ন সঞ্জয় এক হাতেই গলা-মুখ টিপে ধরেছিল তিলোত্তমার! ‘ফাঁস’ চাঞ্চল্যকর তথ্য

আদালতে মামলা (RG Kar Case) চলাকালী অ্য়ানাটমি বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাস সাক্ষ্য দানের সময় জানিয়েছিলেন, ‘মৃতদেহ বিকেল পাঁচটা দশ মিনিটে মর্গে পৌঁছেছিল।  নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও টালা থানার বিশেষ অনুমতিতে করা হয়েছিল ময়নাতদন্ত’। নির্দেশ নামার ২৩ নম্বর পাতায় নিহত তরুণী চিকিৎসকের পারিবারিক বন্ধুর বয়ানে বলা হয়েছে তড়িঘড়ি শেষকৃত্য খুবই সন্দেহজনক এবং মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেন যা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিলোত্তমার পরিবার। সে সময় নির্যাতিতার বাবা-মা জানিয়েছিলেন তাঁদের মেয়ের দেহ কার্যত হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তড়িঘড়ি শেষকৃত্য করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরাও।

RG Kar Case

মুখ্যমন্ত্রী টাকার কথা বললে তিলোত্তমার মা বলেছিলেন, তাঁদের মেয়ে বিচার পেলে, দোষীদের শাস্তি হলে তারা নিজেরা গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আসবেন। তিলোত্তমার এক বন্ধুও জানিয়েছিলেন তড়িঘড়ি শেষকৃত্য সম্পন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা মনে করেন না এই ঘটনা সঞ্জয় একা ঘটিয়েছে। তাই আসল সত্যি যাতে বেরিয়ে আসে তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর