আমৃত্যু কারাদণ্ড সঞ্জয়ের! সন্দীপ-পুলিশকে নিয়ে বড় পর্যবেক্ষণ! আরজি কর মামলায় বড় খবর

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আরজি কর ধর্ষণ খুন কাণ্ডে (RG Kar Case) গত আগস্ট মাস থেকে উত্তাল রাজ্য। সোমবার এই মামলায় সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা করেছে শিয়ালদহ আদালত (Sealdah Court)। তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। নিজের শতাধিক পাতার নির্দেশনামায় রায়ের বিষয়টি ব্যাখ্যার পাশাপাশি বেশ কিছু পর্যবেক্ষণও রয়েছে বিচারক অনির্বাণ দাসে। এর মধ্যে পুলিশ ও আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে (Sandip Ghosh) নিয়েও বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ আছে বলে খবর।

আরজি কর (RG Kar Case) আদেশনামায় বিরাট পর্যবেক্ষণ!

আরজি কর কাণ্ডে প্রথমে তদন্ত করছিল কলকাতা পুলিশ। পরবর্তীতে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। বিচারক অনির্বাণ দাস নিজের নির্দেশনামায় পুলিশি তদন্তে কোথায় গাফিলতি ছিল সেকথা উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গেই আরজি কর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নিয়েও পর্যবেক্ষণ রয়েছে বলে খবর।

বিচারক দাসের নির্দেশনামায় পর্যবেক্ষণ, আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) খুনের ঘটনা সামনে আসার পর এফআইআর থেকে পুলিশি তদন্তে গলদ ছিল। নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছিলেন টালা থানার এসআই সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাত ১১:৪৫ মিনিটে আরজি কর কাণ্ডে এফআইআর হয়েছিল। তবে নথিতে সেই সময় উল্লেখ করা হয়েছে ১০:১০ মিনিট। যদিও সেই সময় এসআই সুব্রত থানায় ছিলেন না। তাঁর কাজকে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেছেন বিচারক। ‘কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এসআই নিজের অবৈধ কাজকর্মের যে বিবরণ দিয়েছেন, সেটা শুনে আমি স্তম্ভিত’, পর্যবেক্ষণে বলেছেন বিচারক।

আরও পড়ুনঃ সঞ্জয়ের ফাঁসি চায় রাজ্য! ‘এত ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে কিছু করতে হবে না’! মমতার উদ্দেশে তিলোত্তমার বাবা

সেই সঙ্গেই লালবাজারের উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের তৎকালীন ওসি রূপালি মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকার সমালোচনাও করা হয়েছে আরজি কর (RG Kar Case) নির্দেশনামায়। সেখানে বলা হয়েছে, রূপালি মুখোপাধ্যায় গত ৯ আগস্ট অভিযুক্তের ফোন নিয়ে টালা থানায় রেখে দিয়েছিলেন। তিনি কেন সেই কাজটি করেছিলেন? প্রশ্ন বিচারকের। একইসঙ্গে বিচারক জানিয়েছেন, সেই সময় ফোনের মধ্যে কোনও কারসাজি হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এর প্রেক্ষিতে লালবাজারের উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের তৎকালীন ওসি যে যুক্তি দিয়েছিলেন, তা খুবই দুর্বল বলে জানিয়েছেন বিচারক।

আরজি কর নির্দেশনামায় হাসপাতালের তৎকালীন ওসি সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক। বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সিনিয়র ডাক্তার সুমিত তপাদার মহিলা চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ দেখে বুঝেছিলেন তাঁকে খুন করা হয়েছে। তখন তিনি চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে বিষয়টি জানান। তিনি তখন সুমিতকে বলেন, হাসপাতালের সুপার ও অধ্যক্ষকে এই বিষয়ে খবর দিতে। ততক্ষণে সুমিত নার্সদের পুলিশকে খবর দিতে বলে দেন। তবে সুমিত যখন আরজি করের তৎকালীন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ ও অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ফোন করেন, তাঁরা ফোন ধরেননি।

RG Kar case

পরবর্তীতে সন্দীপ ফোন করে চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সুমিত অবশ্য তেমনটা করেননি। আরজি করের (RG Kar Case) তৎকালীন অধ্যক্ষ কেন এই নির্দেশ দিয়েছেন প্রশ্ন তোলেন বিচারক। নির্দেশনামা থেকে জানা যাচ্ছে, গত ৯ আগস্ট আরজি করে কর্মরত থাকা সহকারী সুপার (নন মেডিক্যাল) সুচরিতা নির্যাতিতার পরিবারকে ফোন করে জানান, তাঁদের মেয়ের শরীর ভালো নেই। পরবর্তীতে সুচরিতা জানান, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সেই সময় সামনে থাকা সুমিত এর প্রতিবাদ করেন। সুচরিতার এহেন কার্যকলাপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক।

বিচারক অনির্বাণ দাস নিজের নির্দেশনামায় জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট আরজি করে (RG Kar Case) মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর সন্দীপ একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে সিনিয়র চিকিৎসক সুমিতকেও ডাকা হয়। তবে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তিনি সেখানে ঢুকতে পারেননি। কেন সেই বৈঠকের বয়ান নথিবদ্ধ করেনি পুলিশ? প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, কেন সেদিন সন্ধ্যা ৬টা অবধি নির্যাতিতার পরিবারকে অপেক্ষা করানো হয়েছিল?

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর