বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ৯ আগস্ট। আরজি কর হাসপাতালের চারতলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল পিজিটি ছাত্রীর মৃতদেহ। জানা যায়, ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছেন তিনি। আজ এই ঘটনার দু’মাস হল। সম্প্রতি এই মামলায় (RG Kar Case) প্রথম চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। জানা যাচ্ছে, সেখানে সঞ্জয় রায়কেই ধর্ষক, খুনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কী কী লেখা রয়েছে সেখানে? ইতিমধ্যেই তা প্রকাশ্যে এসেছে।
আরজি কর কাণ্ডের (RG Kar Case) চার্জশিটে কী লেখা রয়েছে?
রিপোর্ট অনুযায়ী, সিবিআইয়ের চার্জশিটের (CBI Chargesheet) আরজি কর কাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে সঞ্জয়ের গ্রেফতারি, ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট- সবটাই বিশদে তুলে ধরেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ৮ আগস্ট রাতে ২৪ ঘণ্টার অন কল ডিউটিতে ছিলেন প্রয়াত পিজিটি ছাত্রী। রাত ১১:১৫-তে মায়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয় তাঁর। পরেরদিন সকাল ১১:১৫ নাগাদ মেয়ে অসুস্থ বলে তাঁর বাড়িতে ফোন যায়।
এরপর নির্যাতিতার বাবা-মা হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানে গিয়ে প্রয়াত চিকিৎসককে তাঁর বাবা কী অবস্থায় দেখেছিলেন সেটা চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত ৮ আগস্ট সকালে ৮:১০ নাগাদ নিজের গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। পরেরদিন অবধি তাঁর ডিউটি ছিল। রাতে বেলা পাঁচজনের জন্য একটি অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবার অর্ডার করে। সেমিনার রুমে ডায়াসে বসে খাবার খাওয়ার পর সেখানেই বিশ্রাম নেবেন বলে তিনি থেকে যান।
আরও পড়ুনঃ আরজি কর কলকাতা মেডিক্যালের পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল! ফের গণ ইস্তফা ডাক্তারদের!
পরের দিন সকালে সেমিনার হলে গদির ওপর নির্যাতিতাকে পড়ে থাকতে দেখেন একজন ডাক্তার (RG Kar Case)। এরপর তিনি আরেকজনকে খবর দেন। এরপর আরও কয়েকজন মহিলা পিজিটি তাঁর দেহ দেখেন। এরপর নির্যাতিতা যে ডাক্তারের কাছে এমডি করছিলেন তাঁকে খবর দেওয়া হয়। তিনি এসে দেখেন তাঁর দেহে প্রাণ নেই। তাঁর চোখ ডায়ালেটেড ও স্থির হয়ে গিয়েছিল। এরপর তাঁর নির্দেশ মতো একজন মহিলা চিকিৎসক নির্যাতিতার শরীর বেডশিট দিয়ে ঢাকা দিয়ে দেন। ততক্ষণে অধ্যক্ষ সহ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশের কাছে খবর চলে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে আসেন আউটপোস্টের এএসআই বাসুদেব কুণ্ডু। খবর যায় টালা থানায়। এরপর সেখানকার পুলিশ আধিকারিকরা আসেন।
নির্যাতিতার মা-বাবার আসার আগে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও সায়েন্টিফিক উইং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সহ ফোটোগ্রাফার আরজি করের (RG Kar Case) ঘটনাস্থলে এসে যায় বলে দাবি করা হয়েছে চার্জশিটে। রিপোর্টে অনুযায়ী, চার্জশিটে বলা হয়েছে ডাঃ পলি সমাদ্দার নির্যাতিতার দেহের পেরিফেরাল ইনস্পেকশন করেন। ১২:৪৪ এ মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করা হয়। ১:৪৭ -এ তৈরি হয় ইনজুরি রিপোর্ট। ১:৫০ -এ টালা থানার এসআই এসকে ঝাকে তা দেওয়া হয়।
এরপর নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা এবং প্রতিবাদকারী পড়ুয়াদের অনুরোধে টালা থানার তৎকালীন এসআই অভিজিৎ মণ্ডল এসিজেএম শিয়ালদহের কাছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে সুরতহালের জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ৯ তারিখ বিকেল ৪:২০ থেকে ৪:৪০ অবধি সুরতহাল হয়। সেখানে নির্যাতিতার (RG Kar Case) মা ও দু’জন ডাক্তার ছিলেন। রিপোর্টে মৃতার শরীরে কী কী আঘাতের কথা উল্লেখ ছিল সেটা চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর সেদিনই সন্ধ্যা ৬:১০ থেকে ৭:১০ অবধি তিন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড ভিডিওগ্রাফি সহ নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত করেন। সেই সময় ভিসেরা, যোনি সোয়াব, রক্ত, চুল, নখ সহ নানান জায়গার সোয়াব নেওয়া হয় এবং সেগুলি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর এফএসএল মোবাইল ইউনিটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন থেকে শুরু করে সিজার মেমো বানানো, ইউডি কেস ৮৬১ রেজিস্টার করা, রিপোর্ট জমা দেওয়া সব কিছু চার্জশিটে তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুনঃ মধ্যরাতেই বিরাট পদক্ষেপ! পুজোর মধ্যেই আরও চাপে সরকার? মমতাকে বিস্ফোরক চিঠি ডাক্তারদের
এরপর সঞ্জয়ের (Sanjay Roy) গ্রেফতারির কথাও তুলে ধরা হয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। আরজি করের সিসিটিভি ফুটেজে তাঁর উপস্থিতি থেকে শুরু করে শরীরে আঘাতের চিহ্ন, সবটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চার্জশিটে তুলে ধরেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, নির্যাতিতার শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনার সঙ্গে সঞ্জয়ের দেহরসের এবং লালারসের নমুনা মিলে গিয়েছে। তাঁর মোবাইলের সিএএস ও সিডিআর সংগ্রহের কথাও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলি বিশ্লেষণের পর দেখা গিয়েছে, আরজি করে উপস্থিতির তথ্য সেটার সঙ্গেও মিলে গিয়েছে।
রিপোর্ট বলছে, সিবিআই চার্জশিটে আরও একাধিক তথ্য-প্রমাণের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে আরজি করের ধর্ষণ খুনের (RG Kar Case) সঙ্গে ধৃত সঞ্জয় রায়ের যুক্ত থাকা বেশ স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলের কথাও উল্লেখ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বলা হয়েছে, তাঁরা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া কিংবা সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য কিছু করা বা না করার বিষয়টি সামনে এসেছে। এই দু’জনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে থাকার বিষয়ে তদন্ত এবং এই অপরাধের বিষয়ে যদি আর কেউ আদৌ জড়িত থাকে সেই বিষয়েও তদন্ত চলছে বলে চার্জশিটে জানানো হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।