বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্য সরকার, পুলিশ প্রশাসন সহ সিবিআই, সকলের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন আর জি করের (RG Kar) নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা। যেভাবে প্রতিনিয়ত তাদের একশ্রেণীর মানুষ আক্রমণ করে যাচ্ছেন তার বিরুদ্ধে এবার পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন সন্তানহারা মা। গত ৯ অগাস্টের সেই ঘটনা। হাসপাতালে ডিউটি করতে গিয়ে ধর্ষণ হয়ে খুন হতে হয়েছিল তাদের মেয়েকে। আজ দীর্ঘ পাঁচ মাস পর অভিযুক্ত সিভিকের সাজা হলেও তাদের মেয়ে কি ন্যায়বিচার পেয়েছে? বাংলাহান্টকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজেদের ক্ষোভ-রাগ, যন্ত্রনার কথা বললেন তিলোত্তমার মা-বাবা।
দিনরাত এক করে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় ছোটাছুটি করছেন তারা। একটাই দাবি, মেয়ের ন্যায়বিচার। এদিকে মেয়ের বিচার ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ের প্রতিনিয়ত তৃণমূল নেতাদের একাংশের কুরুচিকর আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। এই বিষয়ে প্রশ্ন করতে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘আমি এখন যে মানসিক অবস্থায় আছি ওনাদের কথা আমার কাছে পৌঁছায় না। আমার হৃদয় এতটাই ক্ষত যে ওনাদের কথায় আমার আঘাত লাগে না। আমি রোজ রাতে কাঁদি আর সকালে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে আমার মেয়ের বিচার আমি ছিনিয়ে আনবই যেভাবেই হোক। হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় আমার মেয়েকে ধর্ষিত ও খুন হতে হয়েছে সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী। ঘরের ভেতরের খুন পুলিশ চাইলেই তদন্ত করে সব বের করতে পারতো। পুলিশের গাফিলতি সবটাই।’
সন্তানহারা মায়ের কথায়, ‘আমরা যদি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে অন্যায় করি তাহলে ৯ অগস্ট আমাদের মেয়ের মৃত্যুদিবস সেই দিন আমাদের বাড়িতে আসুন। আমাদের প্লিজ বলুন কি করলে আমরা মেয়ের বিচার পাব। আমাদের মেয়ের ন্যায়বিচারের দাবিতেই আমরা অনড় থাকব। যদি মনে করেন একা সঞ্জয় রায় হাসপাতালে ঢুকে এসব করে গেছে, তাহলে আমার শ্রদ্ধেয় পঙ্কজ রায় দাদা বলেছিলেন যে আর জি কর কি সোনাগাছি? একা একটা সিভিক ভলেন্টিয়ার এসে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করল খুন করল তাহলে আর জি কর কি সোনাগাছি? এখনই বন্ধ করা হোক ওই হাসপাতাল। ‘
CBI তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ
তিলোত্তমার বাবা বলেন, ‘CBI যে কি তদন্ত করেছে তার একটা প্রতিফলন সুপ্রিম কোর্টে দেখা গেল। সিবিআই যে একদম নিষ্ক্রিয়ভাবে তদন্ত করেছে সেটা সলিসেটর জেনারেল তুষার মেহতার কথায় ভেসে উঠেছে। এমন তদন্ত করেছে যে আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে যে আসামি সে ছাড়া পেয়ে যাবে। এত দুর্বল চার্জশিট। আজকে সিবিআই রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় কোনো বিকল্প। সেই সিবিআই এর কর্মকান্ড… কত গাফিলতি করেছে সেটা আজকে সলিসেটর জেনারেল কোর্টে দাঁড়িয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের প্রশ্নে উত্তর দিলে তাদের আসামি ছাড়া পেয়ে যাবে তার মানে তদন্তে কতটা গাফিলতি তার প্রমাণ কোর্টেই পাওয়া গেল।’
‘সঞ্জয় একমাত্র দোষী নয়, নেপথ্যে আরও অনেকে’
তিলোত্তমার মায়ের কথায়, ‘আমরা মনে করি সঞ্জয় একমাত্র দোষী নয়। আরও যারা দোষী তারা এখনও হাসপাতালেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকৃত তদন্ত হোক। সেটা সিবিআই-ই করতে পারবে। কারণ সিবিআই দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা। তাদের উপর আস্থা রেখেই আমরা বলব তারা ভালো ভাবে তদন্ত করুক। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকলের নাম সামনে আসুক। সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক। সঞ্জয়কে একা ফাঁসি দিলে হবে না। কেউ প্রত্যক্ষদর্শী নেই। একমাত্র সঞ্জয় আছে যে হয়তো সবকিছু জানে তাকে মুখবন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনোদিন হয়তো মুখ খুলবে। যারা ওর ফাঁসি চাইছে তারা চাইছে সেই জায়গাটাও যাতে নষ্ট হয়ে যায়।’
শুভেন্দু যোগ, বিজেপিতে যোগদান? ফুঁসে উঠলেন নির্যাতিতার বাবা-মা
তিলোত্তমার বাবা বলেন, ‘তৃণমূলের লোকজনকে আমি সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যিনি আমাদের যারা মেয়ের বিচারের জন্য গাইডলাইন দেবে যারা সহযোগিতা করবে…! আমরা যেখানে একটা সুযোগ পাব আমরা সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ছি যেখানে মেয়ের বিচার পাওয়ার আশা রয়েছে সেখানেই। তৃণমূলের লোকজন আসলেও আমরা সেভাবেই যোগাযোগ করব। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। যারা পুরোনো তৃণমূলের লোকজন আছে পানিহাটি সার্কেল বাদে তারা সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে। আমি কিভাবে কি অবস্থায় আছি ওনারা সব জানেন। আমি আগে কোথাও এটা বলিনি। হয়তো ওদের উপর পার্টির চাপ আসতে পারে। আজকে বলছি।’
আরও পড়ুন:‘আপনার স্বামী যখন বলেছিলেন ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব!’ কোনটায় বেশি লজ্জা… তাপস-পত্নীকে পাল্টা কুণাল
‘আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতা হতে চাইনা। কোনোদিন হয়তো সড় বুথেই যাব না ভোট দিতে। আমাদের মেয়ে হারিয়ে গেছে আমাদের গোটা পৃথিবীই চলে গেছে। ওর বাবার স্বপ্নের রাজকন্যা আমরা হারিয়েছি। তাকে অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এনেছিলাম। আমাদের এখন বেঁচে থাকার মানে বলতে মেয়ের বিচার। মেয়ের বিচার না পেলে শান্তিতে মরতেও পারব না।’ বললেন তিলোত্তমার মা।