বাংলা হান্ট ডেস্ক : বর্তমান প্রজন্মের একটা ধারণা হল, ভালো পড়াশোনা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। ভালো স্কুল, ভালো কোচিং না হলে যেন ভালো রেজাল্ট করা যায়না। সত্যিই কি তাই? সম্প্রতি নয়ডার আকাঙ্খা যেটা করে দেখিয়েছে তাতে তো এই ধারণা মিথ্যা বলেই মনে হয়। একজন রিকশা চালকের মেয়ে হয়ে যে নজীরবিহীন উদাহরণ সে তৈরি করেছে তাতে প্রশংসা না করে পাওয়া যায়না।
এমনিতে কোন পরীক্ষায় যারা টপ করে তাদের কথাই প্রকাশ করে সমাজমাধ্যম। তবে টপার ছাড়াও এমন বহু পড়ুয়া থাকে যাদের পরিশ্রম এবং ফলাফল কম কিছু নয়। আকাঙ্খা এরকমই একটা মেয়ে। যার বাবা একজন রিকশা চালক। কোনভাবে থিন গুজরান হয় তাদের। সে এমন একটা জায়গায় থাকে যেখানে বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধাও পৌঁছায় অবধি না।
এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনা করে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) তে দ্বাদশ শ্রেণীতে ৯২ শতাংশ নম্বর তুলেছে সে। যা সত্যিই একটা বড় বিষয়। আসলে এই শিশুরা এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবেলা করে এখানে পৌঁছায় যেখানে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থানও পাওয়া যায় না। তাই তাদের সাফল্য এবং কঠোর পরিশ্রম সত্যিই মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
আকাঙ্খা নয়ডার একটি বস্তিতে একটি ছোট বাড়িতে থাকে। তার বাবা রাজেশ্বর প্রসাদ রিকশা চালিয়ে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেন। এই রোজগারকে সম্বল করেই মেয়েকে পড়াশোনা করাতেন। মেয়ের পড়াশোনার জন্য নূন্যতম খরচ জোগাড় করতে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা অবিরামভাবে রিকশা চালিয়ে গেছেন তিনি। আর মেয়েও তার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছে।
এদিকে আকাঙ্খাও তার বাবার স্বপ্ন পূরণে কোন কসরত রাখেননি। সে প্রতিদিন ২.৫ কিমি পথ হেঁটে স্কুলে যেত। আকাঙ্খার মা একটি সাক্ষাৎকারে জানান, আকাঙ্ক্ষা শুধু পড়ালেখাই করতেন না, পাশাপাশি বাড়ির কাজও করে। স্কুল থেকে ফেরার পর, সে তার মাকে ঝাড়ু দেওয়া, মুছতে, রান্নার পাত্রে সাহায্য করে এবং তারপর খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করে।
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আকাঙ্কা জানান, তিনি আইনজীবী হতে চান। তিনি জানান, আপাতত তিনি এসএসসি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেও ভবিষ্যতে ভালো এলএলবি কলেজে ভর্তি হতে চান। তার মা বলেন, মেয়ে যা করতে চায়, তাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, তিনি কখনোই ছেলে মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি। তিনি তার মেয়ের জন্য যতটা করেছেন ছেলের জন্য ততটা করেছেন। আকাঙ্ক্ষার মা চান তার মেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। আর এই একই প্রার্থনা এবং আশীর্বাদ করছে গোটা দেশ-ও।