বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক নেতাদের বেসুরো সুর এবং তৎপরবর্তী ক্ষেত্রে দলবদল। আর তাই কেউ একজন বেসুরো হলেই উঠছে দলবদলের গুঞ্জন। গল্পের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল একুশের নির্বাচনের আগেই। তখন অনেকের চোখেই তৃণমূল ছিল রাজনৈতিক পরিভাষায় ‘সিঙ্কিং শিপ’ অর্থাৎ ডুবতে থাকা নৌকা। আর তাই কেউ প্রাণ বাঁচাতে কেউবা মান বাঁচাতে গিয়ে উঠছিলেন গেরুয়া শিবিরের নৌকোয়। কিন্তু নির্বাচন শেষ হতেই হয়েছে পালাবদল। স্বপ্ন পূরণ হয়নি বিজেপির। রাজ্যে দুশো আসনের স্বপ্ন দেখা সত্বেও মাত্র ৭৭ আসনেই থেমে গেছে তাদের পরিবর্তন রথ।
আর তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই ফের একবার শুরু হয়েছে গুঞ্জন। কোন একজন নেতা বেসুরো হলেই গুঞ্জন উঠেছে তিনি কি তবে আবার দল বদল করবেন? ইতিমধ্যেই সরলা মুর্মু, দীপেন্দু বিশ্বাস, সোনালী গুহ সহ আরও অনেকেই কার্যত কাতর আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন তৃণমূলের কাছে। বিশেষত মুকুল রায় ঘাসফুল শিবিরে যোগদানের পর থেকে আরও বেড়ে গিয়েছে এই জল্পনা।
তবে এই দ্বন্দ্ব শুধু ফুলে ফুলে নয়,
অর্থাৎ কেবল যারা তৃণমূল থেকে নির্বাচনের আগে বিজেপিতে এসেছিলেন তারাই আবার বেসুরো হচ্ছেন তাই নয়, এবার ভিন্ন সুর ধরলেন লাল ব্রিগেড থেকে গেরুয়া শিবিরে আসা রিঙ্কু নস্করও। সিপিআইএম থেকে এমএলএ হবার লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন রিঙ্কু। কিন্তু যাদবপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রিঙ্কু নস্কর তৃণমূলের মলয় মজুমদারের কাছে প্রায় ৪৪ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হন। এমনকি দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিপিআইএমের সুজন চক্রবর্তীর থেকেও ৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। কার্যত তারপর থেকেই গৃহবন্দী রিঙ্কু।
যদিও খাতায়-কলমে এখনও তিনি ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর। তবে মাঝেমধ্যে বাড়িতে বসে শংসাপত্র সই করা ছাড়া এখন আর তেমন কোন কাজ নেই তার । তিনি কলকাতা পুরসভার কার্যত ১৫ বছরের টানা কাউন্সিলর। কিন্তু এদিন তিনি জানান, “আমার ওয়ার্ড অফিস দখল হয়ে গিয়েছে। আমার পাশে কেউ নেই, যারা ছিল তাদের অনেক কর্মী এখন ঘর ছাড়া। এখন ঝামেলা করতে গেলে হামলা হতে পারে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে একসময় বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে কেউই তার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করেননি ডঃ সুভাষ সরকার ছাড়া। অন্তত এমনটাই অভিযোগ রিঙ্কুর। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “দিলীপ ঘোষ বা শুভেন্দু অধিকারী–সহ কোনও রাজ্যস্তরের নেতাই আর যোগাযোগ রাখেননি। ফোনও করেননি। একমাত্র ডাঃ সুভাষ সরকার যোগাযোগ রেখে চলেছেন।”
স্বাভাবিকভাবেই তার এই বেসুরো ভাব নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি ফের একবার দল পরিবর্তনের ছক সাজাচ্ছেন রিঙ্কু। যদিও এর উত্তর দেবে সময়ই? তবে তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, কোন ওয়ার্ড অফিস দখল করা হয়নি। ওয়ার্ড অফিসে পুরসভার কর্মীদের বসার কথা আর তারাই বসছেন। উনি কার্যত নিজের এলাকায় যেতে পারছেন না কারণ বিধানসভা নির্বাচনে উনি তৃতীয় হয়েছেন।