মুদির দোকানি থেকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা, কোন মন্ত্রে এই উত্থান অনুব্রত মণ্ডলের?

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের বুকে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে সর্বদা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন, এমন কোন ব্যক্তির নাম বলতে গেলে প্রথমেই আসে বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম। কখনো ‘খেলা হবে’, আবার কখনো ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’ ইত্যাদি হুঙ্কার দেওয়ার মাধ্যমে সর্বদাই খবরের শিরোনামে থাকেন কেষ্ট তথা অনুব্রত মণ্ডল। এমনকি বীরভূম জেলার অনেকের মতে, তিনি এতটাই শক্তিশালী যে তাঁর কথাতে বাঘে, গরুতে এক ঘাটে পর্যন্ত জল খায়। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে সেই বিতর্কিত ব্যক্তি অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উত্থানের কাহিনী একটু ভিন্ন রকম।

প্রচার মঞ্চ থেকে সংবাদমাধ্যমে সামনে সর্বদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতার জীবনে সংগ্রাম কাহিনী শুনলে যে কোন মানুষের চোখ কপালে উঠবে। জানা যায়, রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি তাঁর বাবার মুদির দোকানে পর্যন্ত কাজ করতেন। ফলে প্রশ্ন উঠতে পারে যে সেই অবস্থা থেকে কিভাবে আজ তাঁর এই উত্থান। বীরভূমবাসীর কথায়, অষ্টম শ্রেণী পাস করে তিনি তাঁর বাবার মুদির দোকানে বসে পড়েন কাজ করতে। তবে রাজনৈতিক প্রতিভা থাকার জন্য এই প্রেক্ষাপটে উঠে আসতে তাঁর বেশী সময় লাগেনি।

প্রথম জীবনে অনুব্রত মণ্ডল কংগ্রেস করলেও পরবর্তীকালে সেই এলাকায় সুশোভন নামের এক ব্যক্তি তৃণমূল ছেড়ে চলে গেলে সেই জায়গায় আসেন কেষ্ট। এরপরই বীরভূম জেলার সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। জেলা সভাপতি হিসেবে কাজ করতে করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহের পাত্র হয়ে ওঠে অনুব্রত, ফলে এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

jpg 20220407 132616 0000

রাজনৈতিক প্রাঙ্গনে প্রবেশ করার পর থেকে কখনো ‘খেলা হবে’, আবার কখনো ‘চড়াম চড়াম ঢাক বাজবে’ ইত্যাদি কথা বার্তার মাধ্যমে সবসময় শিরোনামে থাকেন তিনি। জানা যায়, অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রী মারাত্মক রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও তৃণমূলের এই নেতার নিজের শরীরের পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। বিভিন্ন রোগ থাকার পাশাপাশি অক্সিজেন নিতেও অসুবিধা হয় তাঁর। কিন্তু এরপরেও গোটা পশ্চিমবঙ্গের বুকে নিজের প্রভাব খাটিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।

এলাকায় অনেকে রবিনহুডের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের তুলনা করলেও তিনি এ ব্যাপারকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তবে অনুব্রতর নামে বিতর্ক থাকার পাশাপাশি একাধিক ভালো কাজেও তিনি নিজেকে সামিল করেন। এলাকাবাসীর মধ্যে সাধারণ মানুষের অনেক কাজে সাহায্য করেন কেষ্ট। অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে দেওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষের চিকিৎসার খরচ বহন করলেও তৃণমূলের এই নেতার নামের পাশে একাধিক বিতর্ক রয়েছে। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে যেমন খুনের মামলা রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে সিবিআইয়ের নজরে রয়েছেন এই নেতা। সম্প্রতি, অনুব্রত মণ্ডলের সিবিআই দপ্তরে ডাক পরার পর একাধিক ভাবে তাঁকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি।

anubrata 5

গত পরশু, বীরভূম থেকে রওনা দিয়ে কলকাতায় এসে সিবিআই দপ্তর এ যাওয়ার আগে তিনি সোজা রওনা দেন এসএসকেএম হাসপাতালে। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতা যে সিবিআই এর হাত থেকে বাঁচার একটি বাহানা, তা উল্লেখ করে তাঁকে খোঁচা দেয় একাধিক বিরোধী নেতা। তবে একাধিক বিতর্ক সত্ত্বেও অনুব্রত মণ্ডল প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন যে, মুদির দোকান থেকে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে তিনি হলেন বীরভূমের বেতাজ বাদশা।


Sayan Das

সম্পর্কিত খবর