বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলা বিনোদন দুনিয়ার নক্ষত্র পতন হয় ২০১৭ তে। প্রয়াত হন বিশিষ্ট অভিনেত্রী রীতা কয়রাল (rita koyral)। দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক আইকনিক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন ছয় করেছিলেন তিনি। আক্ষরিক অর্থেই বহুমুখী প্রতিভা ছিলেন রীতা কয়রাল। নেগেটিভ চরিত্রই হোক বা স্নেহময়ী মা, অভিনয়ের জাদুতে জীবন্ত করে তুলতেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ অভিনয়ের কেরিয়ারে একাধিক বার প্রতারিত হয়েছিলেন রীতা কয়রাল, যে দুঃখ চিরকাল থেকে গিয়েছিল তাঁর সঙ্গে।
১৯৫৯ সালে কলকাতায় জন্ম হয় রীতা কয়রালের। প্রথম জীবনে দূরদর্শনেরেকজন সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে অসামান্য নাচের প্রতিভাও ছিল তাঁর। সেই সূত্রেই চেনা পরিচয় অভিনয় জগতের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে। পরিচালক বিষ্ণু পাল চৌধুরীর ‘জননী’ সিরিয়ালে পার্থ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রীতা কয়রাল। এই চরিত্র প্রভূত জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল তাঁকে।
সেই শুরু। তারপর একের পর এক সিরিয়াল, সিনেমায় অভিনয় প্রতিভা দেখিয়েছিলেন তিনি। বড়পর্দা ছোটপর্দা দুদিকেই সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন অভিনেত্রী। ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্না সেন, অঞ্জন দত্তের মতো পরিচালকদের ছবিতেও কাজ করেছেন রীতা কয়রাল।
এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন রীতা। ২০-৩০ পাতার স্ক্রিপ্ট একবার পড়লেই গড়গড় করে বলে যেতে পারতেন। এমনি মুখস্থবিদ্যা ছিল তাঁর। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচটাও চালিয়ে গিয়েছিলেন সমান তালে। পরবর্তীকালে নাচের স্কুলও খুলেছিলেন রীতা কয়রাল।
এমন প্রতিভাকেও প্রতারণার শিকার হতে হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘বাড়িওয়ালি’তে অনুপম খেরের স্ত্রী কিরন খেরের গলার ডাবিং করেছিলেন তিনি। কিন্তু রীতাকে বলা হয়েছিল ছবিটি যতক্ষণ না মুক্তি পাচ্ছে ততক্ষণ এই বিষয়ে মুখ না খুলতে। তাই কেউ জানতেও পারেনি তখন। সেই সময় রীতার অভিনীত ‘পারমিতার একদিন’ ছবিটিও জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। দুটি ছবিতেই একই গলা দেখে পরিচালক গৌতম ঘোষ প্রথম বিষয়টা নিয়ে মুখ খোলেন।
বিষয়টা নিয়ে তিনি মুখ খুলতে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল সেই সময়। এমনকি কিরন খেরকেও সেদিন পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এরপর রীতার কাছে অনুপম খেরের ফোন আসে। তাঁকে বলা হয়, ডাবিংয়ের জন্য তিনি যা পারিশ্রমিক পেয়েছেন তার থেকে আরও বেশি অঙ্কের টাকা রীতাকে দেওয়া হবে যদি তিনি বলেন ডাবিংটা তিনি করেননি। রীতা একথা বলতে অস্বীকার করলে অনুপম তাঁকে হুমকি দেন ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাজ পাবেন না।
এই ঘটনার কথা নিজে মুখে ক্যামেরার সামনে স্বীকার করেছিলেন রীতা কয়রাল। জাতীয় পুরস্কার আর তাঁর পাওয়া হয়নি। ২০১৭ সালে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন রীতা কয়রাল। টলিউডের ইতিহাসে এখনো উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে তাঁর অধ্যায়।