বাংলা হান্ট ডেস্ক: আপনি যদি ছুটির দিনে গ্রামে গিয়ে থাকেন বা আপনার বাড়ি যদি কোনো গ্রামাঞ্চলে হয় তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বাড়ির বাগানে বা মাঠের পাশে গোবরের স্তূপ দেখেছেন। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এই চিত্র অত্যন্ত স্বাভাবিক। পাশাপাশি, এগুলিকে রোদে দিয়ে জ্বালানিও তৈরি করেন বাড়ির মহিলারা। এছাড়াও, সার হিসেবে গোবরের ব্যবহার আমরা প্রায়ই দেখেছি।
কিন্তু, কখনও শুনেছেন যে গোবর দিয়েও ব্যাগ-চপ্পল কিংবা আবিরের মত প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হতে পারে! শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এই কাজ অত্যন্ত সফলতার সাথে করেই বর্তমানে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন ছত্তিশগড়ের রীতেশ আগরওয়াল। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি তিনি খুলে দিয়েছেন উপার্জনের এক নতুন দিগন্তও।
ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের গোকুল নগরে বসবাসকারী এই পশুপালক ইতিমধ্যেই গোবর থেকে কয়েক ডজন জিনিস তৈরি করেছেন। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, গত তিন বছরে রীতেশ গোবর থেকে ব্যাগ, মানিব্যাগ, প্রতিমা, প্রদীপ, ইট, রং, আবির এমনকি চপ্পলও তৈরি করেছেন। আর এই খবর সামনে আসতেই অবাক হয়েছেন অনেকেই।
গোবর থেকেও যে এতকিছু তৈরি হতে পারে তা কল্পনাই করতে পারেননি কেউই। জানা গিয়েছে যে, রীতেশ রায়পুর থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে, ২০০৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। অনেক কোম্পানিতে চাকরি করলেও কোনটাতেই তেমন মানসিক প্রশান্তি পাননি তিনি। রীতেশ সবসময়ই নতুন কিছু করতে চাইছিলেন। কিন্তু, ঠিক কোন পথে তিনি হাঁটবেন তা বুঝতে পারছিলেন না কিছুতেই।
এই প্রসঙ্গে রীতেশ জানিয়েছেন, “আমি প্রায়ই রাস্তায় গরুগুলিকে ঘুরে বেড়াতে দেখতাম। এসব গরুর অধিকাংশই আবর্জনা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকে আবার দুর্ঘটনারও শিকার হয়। আমি তাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। ২০১৫ সালে চাকরি ছাড়ার পর আমি একটি গোশালায় যোগ দিয়ে তাদের দেখভাল করতে শুরু করি।”
আমরা প্রায়সই গরুর পেট থেকে প্লাস্টিক পাওয়ার মত মর্মান্তিক খবর শুনতে পাই। রীতেশও খুব ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্লাস্টিক খাওয়ার কারণে প্রচুর সংখ্যক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সবার চেষ্টা করা উচিত। যে কারণে তাঁরা গোবর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে পরিবেশ থেকে প্লাস্টিক দূর করার চেষ্টা করছেন।
এই প্রসঙ্গে রীতেশ জানান, গোবর থেকে চপ্পল তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ। আয়ুর্বেদিক ভেষজ, চুন, গোবরের গুঁড়ো এবং আঠা মিশিয়ে চপ্পল তৈরি করা যায়। ১ কেজি গোবর থেকে ১০ টি পর্যন্ত চপ্পল তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। এই চপ্পলগুলি ৩-৪ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও নষ্ট হয় না। রোদে শুকিয়ে আবারও ব্যবহার করা যায় এগুলিকে।
পাশাপাশি, গোশালায় কাজ করার সময়, রীতেশ গরু সম্পর্কিত অন্যান্য প্রকল্পেও কাজ করার সুযোগ পান। তাঁরা জানতে পারেন যে, সমস্ত ধরণের গরুর গোবর থেকেই একাধিক জিনিসপত্র তৈরি করা যায়। এছাড়াও, ২০১৮-১৯ সালে, ছত্তিশগড় সরকার “গৌঠান” মডেল শুরু করেছিল। রীতেশও এই মডেলের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর ও হিমাচল প্রদেশে গোবর থেকে বিভিন্ন জিনিস তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।
জানা গিয়েছে, গোবর থেকে আবির ও রং তৈরি করতে গেলে প্রথমে তা শুকোতে হয়। এরপর গোবর গুঁড়ো করে তাতে ফুলের শুকনো পাতার গুঁড়ো মেশানো হয়। এরপর এতে কাস্টার্ড পাউডার মেশানোর পর বিভিন্ন রং দিতে প্রাকৃতিক রংও ব্যবহার করা হয়। হলুদ রঙের জন্য হলুদ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, ধনে পাতা ব্যবহার করা হয় সবুজ রঙের জন্য।
এদিকে, গোবর থেকে বিভিন্ন জিনিস বানানো শেখার পর রীতেশ স্থানীয় লোকজনকেও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। পাশাপাশি, অন্যদেরও প্রশিক্ষণও দিতে থাকেন তিনি। বর্তমানে শুধু ছত্তিশগড় থেকেই নয়, বরং আশেপাশের রাজ্য থেকেও তাঁর কাছে গোবরের তৈরি পণ্যের চাহিদা আসতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল যখন ২০২২ সালের বাজেট অধিবেশন পেশ করতে বিধানসভায় পৌঁছেছিলেন, তখন তাঁর হাতে গোবরের তৈরি একটি ব্যাগ ছিল। দশদিনের পরিশ্রমের পর এই ব্যাগটি তৈরি করেছে রীতেশ ও তার সংস্থা “এক পহল”।