বাংলা হান্ট ডেস্ক: বেশ কয়েকদিন ধরেই রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের আবহ শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি, ক্রমশ বাড়ছিল আশঙ্কাও। তবে, এবার বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সেনা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
আর যার জেরে স্বাভাবিকভাবেই ঘোরালো হয়ে উঠেছে ইউক্রেনের পরিস্থিতি৷ এদিকে, এই যুদ্ধের ফলে শুধুমাত্র এই দু’টি দেশেই নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব জুড়েই রীতিমতো জোরদার প্রভাব পড়েছে। আপাত দৃষ্টিতে ভারতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও রাশিয়া- ইউক্রেনের এই সঙ্কটের আঁচ লাগতে চলেছে ভারতীয়দের উপরেও৷
হ্যাঁ, রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহে সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতীয় অর্থনীতির ওপরে। এমনিতেই আজ যুদ্ধ ঘোষণার পর ভারতের শেয়ার মার্কেটে রীতিমতো ধ্বস নামে। বৃহস্পতিবার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই একপ্রকার ভেঙে পড়ে মার্কেট। শুধু তাই নয়, সেনসেক্স প্রায় ১৩ শতাধিক পয়েন্টের বিশাল পতনের সাথে ব্যবসা শুরু করে।
এমতাবস্থায়, দেশীয় বাজারে বাড়তে চলেছে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামও। এদিকে, রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের উৎপাদক দেশগুলির অন্যতম। ফলে আগামী কয়েকদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু একশো ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৯৬.৭ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে৷ ২০১৪ সালের পর যা সর্বোচ্চ৷
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা আরও আশঙ্কা করেছেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে সিএনজি, পিএনজি-র মতো বাড়িতে ব্যবহৃত জ্বালানির দামও বাড়তে পারে। এমনকি, অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে এলপিজি এবং কেরোসিনে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে দাম বাড়বে রান্নার গ্যাসের।
এই প্রসঙ্গে সমীক্ষক সংস্থা জে পি মরগ্যান-এর বিশ্লষণে দাবি করা হয়েছে যে, অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু দেড়শো ডলারে পৌঁছলে বিশ্বের জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রায় ০.৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে৷
পাশাপাশি, এই দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারতেও। এমনিতে অতীতেও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লেই ভারতে পেট্রোল, ডিজেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে৷ এমনকি, গত বছরই পেট্রোল, ডিজেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে দেশ৷
এদিকে, ভারতের মত বড় এবং বিপুল জনসংখ্যার দেশে মোট জ্বালানির চাহিদার ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। ফলে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশের রাজকোষেও ঘাটতি বাড়বে। এছাড়াও, এই যুদ্ধের ফলে শুধুমাত্র যে তেলের বাজারেই আগুন লাগবে তা না, বরং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গেলেও কালঘাম ছুটবে দেশবাসীর।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, কৃষ্ণ সাগর অঞ্চল থেকে গমের সরবরাহ ব্যাহত হলে খাদ্য দ্রব্যের বিপুলহারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। এদিকে, রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম রপ্তানিকারী দেশ এবং ইউক্রেন এই তালিকায় রয়েছে চার নম্বরে৷ গোটা বিশ্বে যে দেশগুলি গম রপ্তানি করে, তার চার ভাগের এক ভাগই উৎপন্ন করে রাশিয়া এবং ইউক্রেন৷
এছাড়াও, রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, করোনা মহামারীর জেরে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এমনিতেই গত এক দশকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ঘটেছে। এমতাবস্থায়, নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। এছাড়াও, রাশিয়া প্যালাডিয়ামের বৃহত্তম রপ্তানিকারী দেশ। এই ধাতু গাড়ি তৈরিতে এবং মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত হয়। এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহে প্যালাডিয়ামের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।