নিজের দাদার মৃত্যুর পর কাঁদেননি, ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর জন্য চোখের জল ফেললেন সায়নী

বাংলাহান্ট ডেস্ক: মৃত্যু চিরকালই দুঃখের। প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়নি তার আপনজনেরা। কিন্তু ঐন্দ্রিলা শর্মাকে (Aindrila Sharma) হারানোর যন্ত্রণাটা যেন বড্ড বেশি বেজেছে সবার বুকে। ঐন্দ্রিলার সুস্থতা কামনায় একজোট হয়েছিলেন গোটা বাংলার মানুষ। কিন্তু সবার সব প্রার্থনা ব্যর্থ করে দিয়ে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই স্তব্ধ হয়েছে ঐন্দ্রিলার হৃদস্পন্দন। চোখে জল সব্বার। হৃদয় নিংড়ানো এক বার্তায় মনের দুঃখ, হতাশা উগরে দিয়েছেন সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh)।

বিগত ২০ দিন ধরে পরিচিত, অপরিচিত সকলেই প্রার্থনা করেছিলেন ঐন্দ্রিলার জন্য, সব্যসাচীর জন্য। তাঁদের লড়াইটাকে কুর্নিশ জানিয়ে ভালবাসা বাঁচিয়ে রাখার কামনা করেছিলেন। সায়নী জানান, ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। অনেক বছর আগে এক অডিশনে দেখা হয়েছিল দুজনের। চোখে চোখ পড়তেই হেসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। সৌজন্যমূলক দুটো কথাবার্তাতেই আটকে ছিল পরিচয়।

Aindrila deatg
এই কাহিনি আট বছর আগেকার। তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঐন্দ্রিলার লড়াই, দু বার ক্যানসারকে হারানোর সংগ্রামের কথা পড়েছেন সায়নী। তিনি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসায়, কাজ শুরু করায় খুশি হয়েছিলেন সায়নী। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক।

সায়নী লিখেছেন, বন্ধু সৌরভ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি, যদি কোনো সাহায্য লাগে। সৌরভ বলেছিলেন, ঐন্দ্রিলার জন্য প্রার্থনা করতে। এই দুটো কথাই সায়নীকে মনে করিয়ে দেয় আট বছর আগের আরেকটা মর্মান্তিক ঘটনার কথা।

সায়নী লিখেছেন, ‘আমার দাদা, জন্ম থেকেই congiental heart disease – এ আক্রান্ত। ভীষণ ক্রিটিকাল দ্বিতীয় হার্ট সার্জারির পর ৯ দিন ধরে কোমাতে। ডাক্তার রা সব চেষ্টা করে হাত তুলে দিয়েছেন। সকালে ফোন, তাড়াতাড়ি আসুন, সুমনের বিপি ৬০/৩০, হার্টবিট বন্ধের পথে। শক দিয়ে রিট্রিভ করার চেষ্টা চলছে। একা একটা অটো নিয়ে ছুটলাম। বয়স ২২… চিকিৎসার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না, শুধু আমার দাদা বুঝি।

বুঝি, মায়ের রোজ রাতে উঠে ডুকরে ডুকরে কান্না, ঠাকুর আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও। বুঝি বাবার সর্বস্ব টুকু বিলিয়ে দিয়ে, ছেলেকে বেস্ট ট্রিটমেন্ট দিয়ে ফিরিয়ে আনার লড়াই। Ccu – এর বাইরে দাঁড়াই। গিয়ে দেখি শক দিচ্ছে। দাদাভাই এর শরীর টা বেড থেকে ১০ ইঞ্চি উঠে যাচ্ছে এক ঝটকায়, আবার পড়ে যাচ্ছে। কোনো মতে হার্টবিট ফেরানো গেল।’

1611084486 saayoni ghosh 1
সায়নী জানান, সেদিনও চিকিৎসক বলেছিলেন, বাঁচার সম্ভাবনা কম। শান্তিতে যেতে দেওয়া উচিত। আর বাঁচলেও বাকি জীবনটা শয্যাশায়ী হয়ে থাকবে। তবুও মিরাক্যলের আশায় ছিলেন সায়নী। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, কথাবার্তা চালাতে। তাতে সাড়া দিলে চিকিৎসাতেও কাজ হবে। হয়েওছিল। দাদাকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলেন সায়নী। মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আছেন।

কিন্তু তারপরেই একদিন হঠাৎ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ। সায়নী লিখেছেন, ‘সেদিন ও চলে যাওয়ার পর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল পড়েনি। আজ পড়লো। ঐন্দ্রিলার জন্য, ওর বাড়ির লোকের জন্য, সব্যসাচীর জন্য। প্রার্থনা, শুভ কামনা, সব কিছুরই নিশ্চই প্রয়োজনীয়তা আছে, কার্যকারিতাও আছে, কিন্তু সেদিন বুঝেছিলাম যে রাখে হরি তো মারে কে আরে মারে হরি তো রাখে কে?’

কিন্তু সায়নী আর্জি জানিয়েছেন, প্রার্থনা করা যেন কেউ বন্ধ না করেন। ঐন্দ্রিলা ছিলেন, আছেন আর থাকবেনও। কিন্তু সব্যসাচীর জন্য প্রার্থনা করা জরুরি। তিনি যেন ভাল থাকেন সেটা এখন দেখতে হবে সবাইকে।


Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর