বাংলাহান্ট ডেস্ক: ডাগর ডাগর চোখের এক মেয়ে। যে চোখের দিকে তাকালে নাকি সংলাপ ভুলে যেতেন স্বয়ং উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee) বাংলা চলচ্চিত্র জগতের গৌরব। স্বর্ণযুগের নায়িকা আজো একই রকম ভাবে তাঁর অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করছেন দর্শকদের। উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে কাজ করেছেন, এই প্রতিভায় মরচে পড়ে না।
ওপার বাংলার মেয়ে সাবিত্রী। দেশভাগের সময়ে এদেশে এসে কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলত তাঁদের। কিন্তু অভাবের মধ্যেও একটি অভ্যাস ছাড়তে পারেননি সাবিত্রী। সেটা হল পান খাওয়া। স্কুলে যাওয়ার সময়ে ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে সেটা দিয়ে নিয়মিত রাসবিহারীতে পান খেতেন তিনি। এভাবেই চোখে পড়ে যান ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
তিনিই প্রথম প্রস্তাব দেন সাবিত্রীকে, থিয়েটারে অভিনয় করার। ‘নতুন ইহুদি’ সাবিত্রীর প্রথম নাটক তথা প্রথম অভিনয়। একদিন তাঁর নাটক দেখতে এসেছিলেন স্বয়ং উত্তম কুমার। পরবর্তীকালে যাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক ক্লাসিক ছবি উপহার দিয়েছেন সাবিত্রী। ব্যক্তিগত জীবনেও বেড়েছে ঘনিষ্ঠতা।
কিন্তু তখন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় কিশোরী। আর পাঁচজনের মতো উত্তম কুমার মানেই বুক ঢিপঢিপ, চোরা উত্তেজনা। মহানায়ককে দেখার জন্য এতই উতলা হয়ে উঠেছিলেন যে ভাঙা ট্রাঙ্কে হোঁচট খেয়ে পড়ে রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আঘাত পাওয়া সার্থক হয়েছিল সাবিত্রীর।
প্রথম দিনেই তাঁকে নিজের নাটকের দলে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন উত্তম কুমার। আনন্দের মুহূর্তেও বাবার একটা কথায় লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে গিয়েছিল সাবিত্রীর। পরে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা সেদিন অগ্রিম টাকা চেয়েছিলেন উত্তম কুমারের কাছে। যুক্তিও ছিল অবশ্য তাঁর কাছে, টাকার অভাবে সংসার চলে না। তাহলে কাজ করলে টাকা চাইতে কী দোষ?
ভাই বা দাদা নেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের। দশ বোন তাঁরা। নিজের গোটা জীবন পরিবারের জন্যই উৎসর্গ করেছেন তিনি। আগে বিয়ের সম্বন্ধ আসলেও নাকি ভেস্তে দিতেন উত্তম কুমার, একথা নিজে বলেছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এখন বোনদের নিয়েই ভাল আছেন তিনি।